বুদ্ধ, ধ্যান এবং প্রার্থনা – তোরিফা নাজমিনা মণি
প্রিয় প্রভু,
একটা শূন্য চেয়ার
একটা নীরব মিলনায়তন
বুদ্ধের পরিচয়করণ—
কী বাগ্মী!
কী অসাধারণ!
হ্যাঁ, সুভুতি, তোমার সাথে বুদ্ধের পরিচয় করিয়ে দেয়ার এটাই একমাত্র উপায়। কেবল নীরবতাই হলো একমাত্র ভাষা যা দিয়ে তাঁকে প্রকাশ করা যায়। শব্দেরা বড়ই লৌকিক, অপর্যাপ্ত এবং সীমাবদ্ধ। কেবল একটা শূন্যস্থান… সম্পূর্ণ নীরব… বুদ্ধের সত্তাকে তুলে ধরতে পারে।
জাপানে একটা মন্দির আছে, সম্পূর্ণ খালি, এমনকি সেখানে বুদ্ধের একটা মূর্তিও নেই,এবং এটা বুদ্ধকে উৎসর্গকৃত মন্দির হিসেবে পরিচিত। যখন দর্শনার্থীরা আসে এবং প্রশ্ন করে, “বুদ্ধ কোথায়? তাঁর নামে এই মন্দির… ।”তখন সেবক হাসেন এবং বলেন, “এই শূন্যস্থান, এই নীরবতা…… এই হলেন বুদ্ধ।”
পাথর তাঁকে তুলে ধরতে পারে না, মূর্তি তাঁকে তুলে ধরতে পারে না। বুদ্ধ এক খণ্ড পাথর নয়, একটা মূর্তি নয়। বুদ্ধ একটা রূপ নয়—বুদ্ধ এক নিরবয়ব সুরভি। এ কারণে বুদ্ধের উপর কথা বলার পূর্বে এই দশ দিনের নীরবতা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। সেই নীরবতাই ছিল সম্ভাব্য একমাত্র মুখবন্ধ।
সুভুতি, তুমি ঠিকই বলেছোঃ “একটা শূন্য চেয়ার……”হ্যাঁ, কেবল একটা শূন্য চেয়ারই তাঁকে উপস্থাপন করতে পারে। এই চেয়ারটা শূন্য, এবং যে মানুষটা তোমাদের সামনে কথা বলছে সেও শূন্য। এটা একটা শূন্যস্থান যা আপনাতে তোমাদের মাঝে পাতিত হচ্ছে। ভিতরে কেউ নেই, কেবল একটা নীরবতা।
কারণ তুমি নীরবতা বুঝতে পারো না, তাই সেটাকে ভাষায় অনুবাদ করতে হচ্ছে। তোমাদের সীমাবব্ধতার কারণে আমাকে সেটা বলতে হচ্ছে; অন্যথায় তার কোন প্রয়োজন ছিল না। সত্যকে (Truth) ভাষায় বর্ণনা করা যায় না, কখনও বলা হয় নি, কখনও বলা হবে না। সকল ধর্মগ্রন্থ সত্য সম্পর্কে বলে, এ সম্পর্কে বলতেই থাকে, কিন্তু কোন ধর্মগ্রন্থই এখন পর্যন্ত সেটা প্রকাশ করতে সক্ষম হয় নি—না বেদ, না বাইবেল, না কোরান—কারণ বিষয়টার বিশেষ প্রকৃতির কারণে সেটা কথায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
এটা বলা যায় না—এটা কেবল প্রদর্শন করা যায়। এটা যুক্তির সাথে প্রমাণ করা যায় না, কিন্তু প্রেম সেটা প্রমাণ করতে পারে, কিন্তু আমার মাঝে ‘আমি’-এর অনুপস্থিতি এর প্রকৃত প্রমাণ হতে পারে। যদি তুমি বুদ্ধকে বুঝতে চাও, বস্তুত, তোমাকে আমার এই নীরবতার নিকটবর্তী হতে হবে, তোমাকে আরো অন্তরঙ্গ, প্রাপণীয় (available), অরক্ষিত হতে হবে, এই না-কেউ বা ব্যক্তিশূন্য (nobody) ব্যক্তির প্রতি যে তোমাদের সাথে এখন কথা বলছে।
আমি কোন ব্যক্তি নই। এই ব্যক্তি অনেক আগেই মরে গেছে। এটা কেবল উপস্থিতি (presence)—একই সাথে অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি। একজন ব্যক্তি হিসেবে, আলাদাভাবে আমি অনুপস্থিত; আমি এখানে একটা বাহন, অতিক্রমণের পথ, একটা ফাঁপা শূন্যগর্ভ বাঁশের মত উপস্থিত আছি। সে বাঁশি হতে পারে—কেবল একটা ফাঁপা বাঁশই বাঁশি হতে পারে।
আমি সমগ্রের (whole) কাছে সমর্পিত। এখন অখণ্ড যা কিছু ইচ্ছা করবেন… যদি তিনি আমার মধ্য দিয়ে বলতে চান, আমি উপস্থিত; যদি তিনি আমার মধ্য দিয়ে বলতে না চান, তবুও আমি উপস্থিত। এখন তাঁর ইচ্ছাই একমাত্র ইচ্ছা। আমার নিজের কোন ইচ্ছে নেই।
সে কারণে অনেক সময় আমার কথার মাঝে অসঙ্গতি খুঁজে পাবে—কারণ আমি কিছু পরিবর্তন করতে পারি না। ঈশ্বর স্ববিরোধী কারণ আপাত দৃষ্টিতে তাঁকে স্ববিরোধী মনে হলেও সেটা সত্য বর্জিত নয় (paradox)। তিনি বিপরীত দুই মেরুকে ধারণ করেনঃ তিনি আঁধার তিনিই আলো, তিনি গ্রীষ্ম তিনিই বর্ষা, তিনিই জীবন এবং মরণ। মাঝে মাঝে তিনি জীবনরূপে কথা বলেন মাঝে মাঝে মরণ এবং কখনও তিনি গ্রীষ্ম তো কখনও বর্ষারূপে আসেন, আবার কখনও বা শীত হয়ে…… আমি কী করতে পারি?
যদি আমি হস্তক্ষেপ করি, আমি ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দেব। এবং যেদিন তুমি এই চেয়ারকে শূন্য দেখতে সক্ষম হবে, এই দেহকে শূন্য দেখতে সক্ষম হবে, এই শূন্য সত্তাকে দেখবে, সেদিন তুমি আমাকে দেখতে পাবে, আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। সেটাই প্রকৃত সময় যখন শিষ্যের সাথে গুরুর মিলন হয়। এটা একটা দ্রবণ, অন্তর্ধান…… শিশিরবিন্দুর সাগরে স্খলন, বা সাগরের শিশিরবিন্দুতে। এটা একই বিষয়! –গুরু শিষ্যের মাঝে অন্তর্হিত হচ্ছেন এবং শিষ্য গুরুতে। এবং তখন সেখানে এক সুগভীর নীরবতার উদয় হয়।
এটা কোন সংলাপ নয়! যেখানে প্রাচ্যের ধর্মগুলো, বিশেষ করে বৌদ্ধধর্ম যেমন খৃষ্টধর্ম, ইহুদি ধর্ম এবং ধর্মের চেয়ে উচ্চে পৌঁছেছে—কারণ ইহুদি ধর্ম বা খৃষ্টধর্ম কোন না কোন ভাবে সংলাপের ধারণার সাথে যুক্ত। কারণ সংলাপ হলেই দ্বৈততাকে মেনে নিতে হয়, দুইকে। ইসলাম, খৃষ্টধর্ম এবং ইহুদিদের ধর্ম হলো প্রার্থনার ধর্ম। প্রার্থনায় মেনে নিতে হয় যে, তোমার থেকে স্বতন্ত্র একজন ঈশ্বর আছেন, যাকে তুমি সম্বোধন করতে পারো।
এ কারণেই মার্টিন বুবারের (Martin Buber) বই খুবই বিখ্যাত হয়েছে—আমি এবং তুমি (I AND THOU)। এই হলো প্রার্থনার মূল কথা। কিন্তু ‘আমি’এবং ‘তুমি’… সংলাপের জন্য দ্বৈততা প্রয়োজন। এবং সে সংলাপ যত সুন্দরই হোক না কেন, তবুও সেটা বিভাজন, একটা বিভক্তি; এখন পর্যন্ত অখণ্ড নয়। নদী সাগরে প্রবেশ করে নি। হয়ত সে খুব নিকটবর্তী হয়েছে, ঠিক কিনারার কাছে, কিন্তু পিছনে কোথাও আটকে আছে।
বৌদ্ধধর্ম প্রাথনার ধর্ম নয়, এটা হলো ধ্যানের ধর্ম। এবং এটাই হলো প্রার্থনা এবং ধ্যানের পার্থক্যঃ প্রার্থনা হলো সংলাপ, ধ্যান হলো নীরবতা। প্রার্থনায় কাউকে সম্বোধন করতে হয়—প্রকৃত বা অপ্রকৃত যাহোক, কিন্তু প্রার্থনায় কাউকে সম্বোধন করতে হয়। ধ্যান মোটেও কারো উদ্দেশ্যে নয়; এটা ব্যক্তির পুরোপুরি নীরবতায় পতিত হওয়া, ব্যক্তির পুরোপুরি অনস্তিত্বে অন্তর্ধান। যখন ব্যক্তির অন্তর্ধান হয় তখন সেটা ধ্যান হয়।
এবং বুদ্ধ হলেন ধ্যান—সেটাই হলো তাঁর বিশেষত্ব। এই দশ দিন আমরা নীরব ছিলাম, আমরা ধ্যানে ছিলাম। তখন আসল কথা বলা হয়ে গেছে। যারা সেই প্রকৃত কথা শুনতে পায় নি আমি এখন তাদের জন্য বলব।
এই দশ দিনের যে ধ্যান পরিচালিত হলো সেটা কিছুটা ভিন্নরূপে হয়েছে—এবং এটাই হলো বুদ্ধ এবং আমার পথের মধ্যে পার্থক্য—একটা ছোট পার্থক্য, কিন্তু সেটা ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। এবং সেটা তোমাদের উপলব্ধি করতে হবে, কারণ আমি নিছক বুদ্ধের ভাষ্যকার নই। আমি কেবল তাঁকেই অনুরণিত করছি না, আমি কেবল তাঁকে প্রতিবিম্বিত করার আয়না নই; আমি একটা সাড়া (response), প্রতিবিম্বন (reflection) নই। আমি পণ্ডিত নই, আমি তাঁর পদ নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি না—আমি একজন কবি!
আমি সেই একই অনস্তিত্বকে দেখেছি যা তিনি দেখেছিলেন, এবং, নিঃসন্দেহে, আমি সেটা দেখেছি আমার নিজস্ব উপায়ে। বুদ্ধের নিজস্ব উপয়ে এবং আমি আমার নিজের উপায়ে বা পদ্ধতিতে—দেখার, সত্তার। উভয় পথই একই শিখরে আরোহন করে, কিন্তু পথ ভিন্ন। আমার পথের একটা ক্ষুদ্র পার্থক্য আছে—ছোট, কিন্তু একটা সুগভীর তাৎপর্য আছে, মনে রেখো।
এই দশ দিন কেবলই নীরব ধ্যান ছিল না—এই দশ দিনে ছিল সঙ্গীত, নীরবতা এবং ধ্যান। এখানে আমার অবদান হলো সঙ্গীত। বুদ্ধ এটাকে বিধিসম্মত মনে করেন নি; তিনি বলেছেন এটা একটা বিশৃঙ্খলা। তিনি বিশুদ্ধ নীরবতার উপর জোর দিয়েছেন, বলেছেন সেটাই যথেষ্ট। এবং এখানেই আমরা তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করার জন্য সহমত হয়েছি।
আমার কাছে সঙ্গীত এবং ধ্যান একই বিষয়ের দুটো রূপ। এবং সঙ্গীত ছাড়া ধ্যানে কিছুটা অপূর্ণতা থেকে যায়; সঙ্গীত ছাড়া, ধ্যান কিছুটা নিস্প্রভ হয়ে যায়, প্রাণহীন। ধ্যান ছাড়াসঙ্গীত কেবলই শোরগোল—সুরেলা, কিন্তু শোরগোল। ধ্যান ছাড়া সঙ্গীত একটা বিনোদন। এবং সঙ্গীত ছাড়া ধ্যান ক্রমাগত নেতিবাচক হয়ে যায়, প্রাণবন্ততা হারায়।
এ কারণে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে ধ্যান এবং সঙ্গীত একই সঙ্গে চলা উচিৎ। তাতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়—দুটোর ক্ষেত্রেই। এর দ্বারা দুটোই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
কেবল তিনটা ‘এম’-কে মনে রেখো। যেমন- প্রথম ‘এম’হলো গণিত (mathematics); গণিত হলো সবচেয়ে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান, দ্বিতীয় ‘এম’হলো সঙ্গীত (music); সঙ্গীত হলো বিশুদ্ধ আর্ট। এবং তৃতীয় ‘এম’হলো ধ্যান (meditation); ধ্যান হলো বিশুদ্ধ ধর্ম। যেখানে এই তিনটা ‘এম’-এর মিলন হয়, সেখানেই তোমার ত্রিত্বলাভ হয় বা সিদ্ধিলাভ (trinity) হয়।
তোমাদের কাছে আমার আসা বৈজ্ঞানিক। এমনকি যদিও আমি অযৌক্তিক বিবৃতি দি, সেগুলো অত্যন্ত যুক্তির সাথে দি। এমনকি যদিও আমি আপাত স্ববিরোধী কোন কিছু দাবি করি, সেগুলো যৌক্তিকভাবে দাবি করি। আমি যা কিছু বলছি তার পিছনে একটা গণিত আছে, একটা পদ্ধতি, একটা নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক উপস্থাপন। আমি কোন অবৈজ্ঞানিক মানুষ নই। আমার বিজ্ঞান আমার ধর্মের যোগান দেয়; বিজ্ঞান কোন কিছুর শেষ নয় বরং একটা সুন্দর প্রারম্ভ।
এবং আমার উপস্থাপন কৌশল শৈল্পিক, নান্দনিক। শক্তিক্ষেত্র সাংগীতিক না হলে আমি তোমাদের সাহায্য করতে পারি না। সঙ্গীত হলো বিশুদ্ধ কলা (art)। তোমার অন্তরতমস্তে প্রবেশের জন্য এটা একটা অত্যন্ত শক্তিশালী যন্ত্র। অবশ্যই ধ্যানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ ছাড়া এটা সম্পূর্ণ হবে না, সবচেয়ে বিশুদ্ধ ধর্ম।
এবং আমরা এখানে সেটার চুড়ান্ত সংশ্লেষণ ঘটাতে চেষ্টা করছি। এটা আমার ত্রিত্বঃ গণিত, সঙ্গীত, ধ্যান। এটা আমার ত্রিমূর্তী—ঈশ্বরের তিন মাত্রা। তুমি ঈশ্বরের একটা মাত্রার মধ্যদিয়ে তাঁর কাছে উপনীত হতে পারো, কিন্তু তাহলে তোমার ঐ ঈশ্বরে উপনীত হওয়ার অভিজ্ঞতা দুই মাত্রার মধ্য দিয়ে উপনীত হওয়ার মত সমৃদ্ধ হবে না। যখন ঈশ্বরকে তুমি ত্রিত্ব হিসেবে জানবে, যখন তুমি তাঁর প্রতিটা মাত্রার সাথে পরিচিত হবে, তখন তোমার অভিজ্ঞতা, নির্বাণ, তোমার আলোকপ্রাপ্তি সর্বোত্তম হবে।
বুদ্ধ কেবল ধ্যানের উপর জোর দিয়েছেন; সেটা ঈশ্বরের একটা মাত্রা বা দিক। মুহাম্মদ গুরুত্বারোপ করেছেন প্রার্থনার, সঙ্গীতের, গায়নের; এ কারণে কোরান সঙ্গীতধর্মী। অন্য আর কোন ধর্মগ্রন্থে কোরানের মত সঙ্গীত নেই। কোরান শব্দটার সহজ সম্পূর্ণ অর্থ হলো, “আবৃত্তি করো! গাও!”সেটাই ছিল মুহাম্মদের প্রথম প্রকাশ। দূর থেকে যেন কেউ বললেন, “আবৃত্তি করো! আবৃত্তি করো! গাও!”
ইসলাম ঈশ্বরের একটা মাত্রা। এবং আরো কিছু ধর্ম আছে যেগুলো ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয় তৃতীয় এমঃ গণিতের মধ্য দিয়ে। এবং জৈনধর্ম সম্পূর্ণরূপে তৃতীয় মাত্রার প্রতিনিধিত্ব করে। মহাবীর আলবার্ট আইনস্টাইনের মত কথা বলেছেন। এটা আকস্মিক ঘটনা নয় যে মহাবীর হলেন মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম মানুষ যিনি আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে বলেছেন। তার পঁচিশ শতক পরে আলবার্ট আইনস্টাইন সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু মহাবীর সেটা দেখেছিলেন তাঁর অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা।
যদি তুমি মহাবীরকে পড়ো, তাঁর বর্ণনা সম্পূর্ণরূপে যুক্তিবাদী, গাণিতিক। জৈন ধর্মগ্রন্থের মধ্যে কোন রস নেই—শুষ্ক, আঙ্কিক। সেটা ঈশ্বরের অন্য আর একটা মাত্রা। এবং পৃথিবীতে কেবল তিন ধরণের ধর্ম বিদ্যমানঃ গণিতের ধর্ম, জৈনধর্ম তার প্রতিনিধিত্ব করে; সঙ্গীতের ধর্ম, যার প্রতিনিধিত্বকারী ধর্মগুলো হলো ইসলাম, খৃষ্টধর্ম, ইহুদিধর্ম, হিন্দুধর্ম; এবং ধ্যানের ধর্ম, যার প্রতিনিধিত্বকারী ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম, তাওধর্ম। এখানে আমার প্রচেষ্টা হলো তোমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ ধর্ম দেয়া, যা এই তিনটা ‘এম’-কেই ধারণ করে। এটা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিযাত্রা। পূর্বে কখনও এমন চেষ্টা করা হয় নি। আমি এমন এক বৈপরিত্য সাধনের চেষ্টা করছি যা পূর্বে কেউ কখনও করেন নি। তোমরা এক বিপজ্জনক ব্যক্তির সাথে চলেছো, কিন্তু তোমাদের চলার পথ অত্যন্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে চলেছে। বিপদ, ঝুঁকি চলার পথকে কুৎসিত করে না, অপরদিকে সেটা চলার পথকে অত্যন্ত চমৎকার আনন্দদায়ক করে তোলে। আমার সঙ্গে যেতে তোমরা যে সব বিপদের মুখোমুখি হবে সেটা তোমাদের রোমাঞ্চিত করবে। এই যাত্রাপথ নিরানন্দময় হবে না, এটা খুবই প্রাণবন্ত হতে যাচ্ছে। আমরা এমন বহুমাত্রিক উপায়ে ঈশ্বরাভিমুখে যাত্রা করতে চলেছি যে, এই যাত্রাপথের প্রতিটা মুহূর্ত মহামূল্যবান হতে চলেছে।
এই বুদ্ধ বক্তৃতামালা আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দশদিনের নীরবতার মধ্যদিয়ে শুরু করেছিলাম। নীরবতার সাথে শুরু করা একটা কৌশল—বুদ্ধ খুবই খুশি হবেন। তিনি নিশ্চয় সঙ্গীতের কারণে একটুখানি কাঁধ ঝাঁকাবেন, কিন্তু আমি কী করতে পারি? আমার কিছু করার নেই। আমার ধর্মকে হতে হবে নৃত্যের, প্রেমের, হাস্যের। এটাকে জীবন-সম্পৃক্ত হতে হবে, জীবনের প্রতি ইতিবাচক। এটা জীবনের সঙ্গে প্রেমাত্মক হতে হবে। জীবন থেকে প্রত্যাহার নয়, জীবনের উদযাপন।