ফেরদৌস নাহার – এর পাঁচটি কবিতা

শব্দঋণ বেড়ে ওঠে

কতদিন পর মাঝরাতে বাড়ি ফিরছি
তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে
গানের অন্তরা ভুলে যাওয়া দিনগুলো মুখ টিপে হাসে

গ্রীষ্মকাম হুল্লোর, রাতের মৃদু বাতাস নাম ধরে ডেকে ডেকে
তাসখন্দের বিস্তৃত পথে অপেক্ষমাণ বনিতার বেড়াল ছুঁয়ে ছিল
কালো গাড়ির খদ্দের আজও অন্ধকারে বেড়াল-নারীকে তুলে নিয়ে যায়
দোকানে সাজানো মাত্রোশকার মিলিত কোরাস সেদিনও গান ধরেছিল
খুব কি দু:খের গান ছিল সেসব

ডাকছে কেউ পালানো স্বভাব

এই যে ঘর পালানো অভ্যাস, ওটা এখন বেড়ে গেছে
নামি-দামি কিছুর কিছু পরিমাণ টানছে না, টানছে পথ, পাথুরে শপথ
ঘুমলে স্বপ্নজাল মৃদু টোকা দেয়- এই ওঠো! তোমার না মাছ ধরতে
যাবার কথা। স্বপ্ন কথা বলে
শশব্যস্ত দেবতারা গাঢ়রূপ অন্ধকার মাখিয়ে দিয়ে বলে-
ঘুমা, ঘুমিয়ে থাক তো! কোত্থাও যেতে হবে না তোর


আমি কিন্তু পালাব। ডাকছে কেউ পালানো স্বভাব। পথের কি অভাব
ঘরে ঘোর মাথাচাঁড়া জবাব, কিছুই পারছে না ঠেকাতে
নাম নেই, নাম দেবো, লাইন করে দাঁড়াও যাত্রা শুরু হবে
টিকেটের প্রথম ঘরে নিজের নাম দেখে চমকে উঠব না একেবারে

হ্যালুইন নাই

অতঃপর আমার অসুখ হল, আমি দিনরাত হ্যালুইনের চরিত্র দেখতে দেখতে কখনো 
ঘুমাই, কখনো জেগে থাকি। অবশেষে আমার রাত দিন পালটে গিয়ে সে এক অদ্ভুত 
টাইম টেবিলে এসে দাঁড়াল। মনে মনে অপেক্ষা করি কবে বাড়ি যাব, কবে সময় 
মিলিয়ে ঘুমাব জাগব
তারপর কত বছর উড়ে উড়ে ক্লান্ত ডানায় আঁকিবুকি কাটতে কাটতে তোমাকে 
পাঠালাম সাধারণ চিঠি। ভেবেছিলাম যাবে না। কিন্তু ঠিক ঠিকই পৌঁছাল তা। নিদ্রা 
ব্যাঘাতজনিত দুর্ঘটনাসহ টাইম টেবিল পরিবর্তনের সংবাদসমূহ, সব। হ্যালুইনের 
চরিত্রগুলো সারারাত জেগে পিছনে পিছনে দৌঁড়ায়। আমি বাড়ি গেলে সব ঠিক হয়ে 
যাবে। আমার দেশে কোনো হ্যালুইন নাই

একটু ধোঁয়াটে

মুছে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। মুছে যাওয়া আসছে ফিরে ফিরে
চোখের উপরে হাত রেখে অন্ধকারের পরিবর্তে ছবি দেখি
কতকাল এভাবে চলবে জানি না

ডাক দিচ্ছ। শুনতে পাচ্ছি না। শুনতে চাই না। অভিযোগ নেই
অভিযোগ না থাকাও একরকমের অভিযোগ, এসব জেনেছি
নিঃশ্চুপ থাকা থেকে

তীর্থে আছি। ফিরে এসে বলব, কেমন কেটেছে দিন, কেমন ছিল
মাঝরাতের ঘুম ভাঙা বৃষ্টি। অসভ্য ইঙ্গিতে কী কী ঘটেছিল সব বলব
এখন দেখ তো চিনতে পারো কিনা

মৃত্যু রেসেপি

এখনো আমার একুশ বছর বয়স
অভিমানের জামা এখনো নামাইনি গা থেকে। মুছে যাচ্ছে লেবুঘ্রাণ
পিয়াজু বুটের ইফতার সন্ধ্যা। ওই তো মা জায়নামাজে
পিছন থেকে দেখতে দেখতে পালিয়ে যাচ্ছি ছাদে
এখন আমি খুবই নিজের, মৃত্যু রেসেপি শেখা

তুমি আমাকে মৃত্যুর রেসেপি দাও আর আমি মৃত্যু রান্না করি
কাল আকাশে চাঁদের অসুখ তীব্র অভিঘাতে
টুকরো টুকরো জ্যোৎস্না হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘাটে
সেখানেও দড়ি-কলসি অপেক্ষাতে
সারাটা দিন কেটে গেল, মৃত্যু এসে নামে সন্ধ্যার ট্রেন থেকে