ফারহানা রহমান’র পাঁচটি কবিতা
জেব্রাক্রসিংয়ের উপর
তন্দ্রাহত এই রাতে
পতনের সুর বাজে যে সিকস্তিতে
সেখানে অন্তরজালে আটকে আছে জ্যোৎস্নারোহিত ক্ষণ
আর অবাধ্য গারদের ভিতর অজস্র ভ্রূণদের যে
আর্তনাদ শুনি, তারা এখন
আমারই চৌকাঠে ভাঙারি বিছিয়ে বসেছে
এই ঘর তো ভেঙে গেছে বহু আগে
তবু কখনো হয়তো আলস্য নিয়ে আসে হাহাকার কোথাও
আর শিশিরের সুর পড়ে থাকে দিগন্তরেখায় ।
এদিকে উদ্বাস্তু জীবনে ফোঁড়ন মিশিয়ে দিয়ে
চলে গেছে কোন এক আজন্ম বাউল
আমি পড়ে থাকি শেষ জেব্রাক্রসিংয়ের উপর
ঘুণে পোকা হয়ে…
কৌশলী
যে সংক্রামক ব্যধিতে
দ্বৈতসত্ত্বা লুকিয়ে থাকে
গলে পড়ে শীত অবাধ্য নয়নে
আর সিনিক দৃশ্যে থমকে থাকে মন
সেখানেই চলে শোষণ !
কী নিদারুণ পাপ !
তুমি যখন কপি পেস্ট করে করে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ
ভীষণ কৌশলী পিচ্ছিল জল
কৌশলে লুকাও সমগ্র আবর্জনা
তখনো ভেসে থাকে ক্ষয় ।
ফাঁকি
কিছুটাতো বিস্ময় ছিলোই
সেতুর ওপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকার
নাজানা রাস্তায় হারিয়ে যাবার ।
যে নিস্তেজ অভিমুখে তোমার
পথিকজন্মের মনোহর সাজিয়েছো
সেখানে নির্জনে হু হু করে ডাকে ডাহুক পাখিরা
বোবা রোদ নিরব ক্লান্তিতে তাকিয়ে তাকিয়ে
ছায়াদের অভিমান দেখে ভাবে
আজন্ম তৃষিত প্রেম নিয়েও কোথাও
আমাদের যৌথ জীবনে বিস্তর
লেখা থাকে ফাঁকি…
লিভিংরুমের কার্পেটের নিচে
ভিজিয়ে দিচ্ছো ফ্রেইগ্রেন্সে
আর চায়ের কাপে কমলার তুমুল আঘ্রাণ
অথচ বাঁকল খসানো আঁধারে হারিয়ে গেছে আলোর প্রিজম
রেশম পোকার মতো গুটিসুটি রমণীর বুকে
নিদ্রাহীন স্বপ্নের ফসিল,
বিষণ্ণ আত্মা
ছিন্নভিন্ন হৃদয়
উদাসীন দুএকটা অভিমানী পালক এদিক সেদিকে
আজ চাপা পড়ে আছে
লিভিংরুমের কার্পেটের নিচে……
পাখি উড়ছে হেমন্ত বাতাসে
দেয়ালের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমি কী দেখি ?
একটি নৌকা ;
আমি বসে আছি ।
আর?
আর একটি নদী
চারদিকে পাহাড় নদীটিকে ঘিরে আছে
অসংখ্য মাছরাঙ্গা পাখি উড়ছে হেমন্ত বাতাসে
আমি খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছি !
আর ?
আর একটি নিরাপদ জায়গা দিয়েছি ওদের
যা, আমার নেই…