তাহিতি ফারজানা- এর কবিতা
“ব্ল্যাক আর্ট”
দেখছো
সমগ্র তারাদল খসে পড়ছে সমান্তরালে
ভাবলে ভ্রম।
পায়ের ছাপের দিকে অগণিত তক্ষকের
ছুটে আসা।
গাছেরা কাঁদছে যুদ্ধোত্তর ধ্বংসের ভারে।
মনে হল সবই ব্ল্যাক আর্ট
ব্ল্যাক আউট।
প্রয়োজনগুলো চাহিদাকে ছুঁতে না পেরে
গুপ্তচর।
তারাখসা নদীপথে তুমি, হে দণ্ডিত,
নগ্নতা পুঁজি করে
জলের গন্ধে গন্ধে গন্ধে ঝুঁকে আছো।
“স্মৃতির হাত”
ঈষদুষ্ণ সাবান জলে
তোমার রুগ্ন বাকল ধুয়ে দেয়া হাতদুটি-
গাছ, মনে পড়ে!
সে হাতে প্রেম-মৃত্যু-একাকীত্বের সৌধ
পৌঁছে দিত শুকনো ফুলকে
শাখা থেকে সমাধিতে।
তোমার অভ্যন্তরে
দেখেছিল অমোঘ ম্যাজিক
তৃষ্ণা, প্রস্থানের সমন আরও কত ইন্দ্রজাল..
ঝাঁকড়া ছায়া মাড়িয়ে
চলে গেছেকবে!
শাখা থেকে সমাধিতে।
“কেন্দ্র বিষয়ক”
১.
বিষণ্ণ মুখের কাছে
রাধাচূড়াগুলি প্রণত থাকে,
যে মুখহারমোনিকারচেয়ে গাঢ়।
ছুটির ঘণ্টা বাজলে
সেখানে কোন সুখী মানুষ
সঙ্গীর হাত ধরে সারারাত কাটিয়ে দেয়
বোকা হাসপাতালে।
শ্যাম্পেনের ফেনায়িত কাল
নেশা ভুলে, নাচ ভুলে
ঝরাপাতা মেরামত করে।
ধ্রুব সে মুখ আড়ষ্ট হলে
শুনে ফেলি
করতালির ভেতরকার বধিরতা।
২.
বলা বাকী ছিল
‘সাবধানে থেক।‘
ঘন কালো গাছবাড়িতে।
উদ্বেগ জাগে।
সূর্য যখন ছুঁড়ে দেয় উঠোনভর্তি দুপুর-
ডেকে নিতে চায়
চাবি হারিয়ে ফেলা প্রিজনে।
অভিমানের বাগান
পাহারা দিতে গিয়ে ভাবি
অপর প্রান্ত ধরে আছো তুমি।
শিহরণ খেলে যায়
এই অন্ধগাছে-
তুমি যার ব্রেইল হয়ে
তুলে ধরো পৃথিবীপুস্তক।
৩.
ঠোঁট থেকে পড়তেই
কথারা
দ্রবীভূত হয়ে যায় বাতাসে।
ফলে চেয়ে থাকি
ভাব প্রকাশ বা ছুঁয়ে দেবার প্রয়োজনে।
চোখের নরমে গেঁথে যায় সুরম্য বেহেশত।
স্পর্শ করি-
প্রতিটি স্পর্শের আছে আত্মা ও শরীর।
“সমুদ্র মন্থন”
সমুদ্রের ভেতর এক রাত্রি আছে
যে অনবরত চক্রান্তে লিপ্ত।
জর্জরিত ভয়ে।
তাকে শোনা যায় কান পাতলে
নৃত্যরত আর্দ্র বালিতে।
সমুদ্রের কাছে ফিরে যেতে যেতে
লাল কাঁকড়া টের পায়
তল বলে কিছু নেই।
আছে অপার্থিব চোরাবালি।
আছে ডিঙিয়ে যাবার কৌশল।
ঝিনুকমঞ্চ, পরিপুষ্ট ঢেউ।
কল্পজগত সত্যি হয়ে উঠে
আলোর প্রতিভাসে।
ভোরের সমুদ্রের পিঠে
ভেসে যায় অনাঘ্রাত কথা
নৌকোসদৃশ।