সমগ্র বাংলাদেশ পরিবহন ( ১০০ হাত দূরে থাকুন ) – অপরাহ্ণ সুসমিতো

৫০ ও ১০০ টাকার ভাংতি নাই

একটা বিস্কুট আচমকা ওর গায়ে লেপ্টে থাকা প্যাকেট থেকে টুকিইইই বলে নেমে পড়ল । ওর গায়ে গায়ে লেগে থাকা অন্য বিস্কুটটাকে বলল;

: শোন চল আমরা হাইড এন্ড সিক খেলি । আমি লুকাচ্ছি । আম্মুকে বলবি না ।

ঠিক ওরই মতো দেখতে যমজ বিস্কুটটা বড়বড় করে তাকিয়ে দেখছিল । সেও চাইছিল ওর মতো টুকি বলে লাফ দিয়ে প্যাকেট থেকে বেরিয়ে পড়ে । কিন্তু গায়ে এত ক্রিম লেগে আছে যে পাশের কিউট বিস্কুট থেকে সে একচুল নড়তে পারছে না । তবুও কাঁদো কাঁদো গলায় বলল;

: এই নাবিস্কো আমাকে নিয়ে যা ।

নেমে যাওয়া নাবিস্কোটা ওর কথার জবাব দিলো না । কথার জবাব না দেয়ার মানে হলো পাত্তা না দেয়া ( অনেকটা লাইক ক্লিক না করার মতো । পড়লাম,ভালো লাগল,তবুও লাইক ক্লিক করলাম না । কোরবানীর বড় গরুর পার্সোন্যালিটির মতো ) ।

বিস্কুটটা গুটুগুটু করে হেঁটে হেঁটে সামনে যাচ্ছে । ভয়ও লাগছে,অচেনা জায়গা । ঠান্ডাও লাগছে । এতদিন কি সুন্দর ভাই বোনদের সাথে লেপ্টে ছিল । ও গড়িয়ে হাঁটছে আবার থামছে । একটু এগুতেই দেখে একটা মোটু পিঁপড়া । চেহারাটা খানিক বিকট কিসিম । ওর দিকে পিলুপিলু করে আসছে । বিস্কুটটা থমকে থাকে । পিঁপড়াটা মহা আনন্দে এগিয়ে এসে বিস্কুটটার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ।

: শুভ সন্ধ্যা । আমি পিপ । এখানেই কাছাকাছি থাকি । এসো পরিচিত হই ।

: আমি বিক্কু । অই যে দেখছো লাল রঙের ..ওটার ভিতরে থাকি । আমরা অনেক ভাইবোন ।

পিঁপড়াটা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতেই টের পেল মিষ্টি বটে এই বিক্কুটা । পেছনের পকেট থেকে সে তার স্যামসাঙ গ্যালাক্সিটা বের করে,কাকে যেন টেক্সট করে । বিস্কুটটা পিঁপড়াটার দ্রুত হাত চালানো দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । করছেটা কি পিপ ?

পিপ চোখের ঝিলিকটা লুকিয়ে বিক্কুকে বলল;

: আমার পরিবারের লোকজনকে খবর দিলাম এখানে আসার জন্য । ওরা তোমার সাথে পরিচিত হলে খুশী হবে ।

বিক্কুটার খানিক ভয় ভয় করতে লাগল । ইচ্ছে করছে জোরে ডাক দেয় : আম্মুউউউ ।

গলা দিয়ে স্বর বেরুল না ।

সারি সারি পিঁপড়া আসতে লাগল টেক্সট পেয়ে ।

আমি যাচ্ছিলাম পাশ দিয়ে,সন্ধ্যার চা খাবো । আজ সারাদিন বৃষ্টি নূপুর । সন্ধ্যায় একজনের সাথে পুটুপুটু করে কথা বলেছি বৃষ্টি মাথায় । আমার আর আমার সেলফোনটার চায়ের তেষ্টা । মাইক্রোওভেনে চা করবো । হঠাৎ তাকিয়ে দেখি কিউট একটা বিস্কুট ডাইনিং টেবিলের উপর । অবাক হলাম । বিকেলে কেনা বিস্কুটটার প্যাকেটটা তো এখনো খুলিনি । এটা এলো কোত্থেকে ?

বিস্কুটটা দেখে চায়ের লোভ আরো বেড়ে গেলো । ভাবলাম: আহ চায়ে ডুবিয়ে নরম বিস্কুট । জম্পেশ ..আহ ..

এক পা এগুতে শুনি,কে যেন অস্ফুট গলায় ডাকছে ।

: আব্বু ।

পেছনে তাকিয়ে দেখি,সর্বনাশ পিচ্চু বিস্কুটটা । দিলাম ধমক ।

: এই ব্যাটা কে তোর বাপ ?

বিক্কুটা ভয় পেয়ে চুপ করে আছে । কথা বলে না আর । এর মধ্যে অনেকগুলো পিঁপড়া বিস্কুটটাকে ঘিরে ফেলছে । প্রাণী জগতে সম্ভবত: পিঁপড়াই পারে তার চেয়ে ওজনে ৪০ গুন ভারী জিনিষ টেনে বা বহন করে নিয়ে যেতে ।

আমি টুপ করে বিস্কুটটাকে তুলে নিলাম টেবিল থেকে । আয়েশ করে চা বানালাম । এখন ফেসবুকে । সোফায় লম্বা করে পা বাড়িয়ে আরামে থৈথৈ আমি । বাইরে এখনো বৃষ্টির অঞ্জনা রঞ্জনা । কাপ থেকে মৃদু ধোঁয়া ওড়ছে । চা খেতে খেতে স্ট্যাটাস লিখব ।

আহা ..

কা তব কান্তা …

ব্যবহারে বংশের পরিচয়

কমলালেবুটা আজ খুব এক্সাইটেড । সেল ফোনে সময় দেখছে ।

( অপেক্ষার সময়ের একটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টাইপ বৈশিষ্ট্য আছে,সেটা হলো অপেক্ষা যখন ঘর থেকে বেরুবেন তখন চারপাশের লোকজন রাস্তার দুই পাশে অপেক্ষা করে । মাননীয় অপেক্ষা তখন ধীরে চলো হে রাজনন্দিনী গান করতে করতে মন বিহারে যান। )

কমলালেবুর তর সইছে না,কখন রাত ১২ টা বাজবে আর সে ১৮ বছরে পা দিবে । ১৮ পা দিলেই সে ফুরফুরা । প্রাপ্ত বয়স্ক । সে অসভ্য ছবি দেখতে পারবে,ভোট দিতে পারবে ।

এরই মধ্যে ফোনে টেক্সট আসা শুরু হয়েছে ।

: হে সুপার ম্যান ডোন্ট ফরগেট টু ওয়ার আন্ডারওয়্যার

: ল পাটক্ষেতে যাইগা

: হ্যাভ সেইফ সেক্স হ্যাভ ফান

: গুডবাই টিন ওয়েলকাম এডাল্ট

কমলালেবু সোফায় পা তুলে টিভি দেখছিল । ফাঁকে ফাঁকে হ্যাপি ফেসবুকিং মোবাইলে । টেনশনে কোথাও তার মন নেই । রিমোট দিয়ে ইচ্ছেমতো চ্যানেল পাল্টাচ্ছে । ওয়েস্ট ইন্ডিজে টাইগাররা হাবুডুবু খাচ্ছে । মন খারাপ শুরু হতেই সে চ্যানেল বদলায় । আচমকা স্ক্রিনে লাক্স ফ্যাশন শো তে ওর চোখ বাণে ভাসা খরকুটোর মতো আটকে গেল ।

একটা আগুন টাইপ মেয়ে শাড়িকে আলতো আড়াল করে উপরে ব্লাউজ আবরণ করেছে ।

মনে হলো কে যেন কমলালেবুর এই গিলে খাওয়া দৃষ্টি সেপটি পিন দিয়ে টিভি স্ক্রিনের সাথে পেস্ট করলো ।

কমলালেবুর গার্লফ্রেন্ড লেবু’র টেক্সট এলো ঠিক সেই কঠিন মূহুর্তে;

: শোনো টিভি গিলে খাবা না । আই রিপিট ডোন্ট ইট হার !

গার্লফ্রেন্ড লেবু সামনে নেই,তবু সে ভয় পেলো । অজান্তেই সাঁ করে চ্যানেল পাল্টে দিল ।

হাতের ডানে রাখা মোবাইল পর্দায় তাকতেই ফেসবুকে ওর হোমপেজ । লেবু’র পনের মিনিট আগের স্ট্যাটাসে চোখ আবার আটকে গেল । প্রেমিকার টুনটুন স্ট্যাটাস ;

: আমি একজন মেয়ে । আমার ব্রেস্ট আছে,ব্রেস্টের ভাঁজ আছে । কারো কোনো সমস্যা ??

কমলালেবুর কানটা লাল হয়ে উঠলো কমলারঙে । লাইক বাটনে ক্লিক করবে কি করবে না ভাবতেই রাত বারোটা বেজে গেল ।

তখনি মোবাইলটা নিশি পাখির মতো বেজে উঠলো । লেবুর ফোন ।

: হে ম্যান । স্বাগতম ১৮

ভদ্রতা বজায় রাখুন

সকালবেলা আমি ভাত খাই না। এখন নাস্তা করতে গিয়ে দেখি রুটি,সিরিয়াল কিছু নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফ্রিজ খুলে বাসি ভাত বের করলাম। তাকিয়ে দেখি ভাতগুলো ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে একটার গায়ে আরেকটা লেগে আছে।

প্লেটে নিয়ে ভাত গরম করবো,এমন সময় দেখি ভাত চেঁচিয়ে বলছে;

: ঠান্ডাই থাকবো,গরম হবো না।

: কি মুশকিল খাবো তো । আজ অন্য খাবার নেই।

: ঠান্ডাই কেবল পরষ্পরকে জড়িয়ে রাখে,জমাট রাখে।

ভাত চোখ বড়বড় করে দেখি বলছে আমাকে।

আহারে জুঁই ফুলের মতো কিউট ভাত বেচারা। আচ্ছা বাবা পরস্পর লেপ্টালেপ্টি করে থাকো।

ফাজিল কোথাকার! বড়দের মতো কথা!

অসভ্য লেপ্টে থাকা ভাত আবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলাম।

কেউ থাকে প্রণয় লেপ্টে,কেউ খিদেয় হাঁ করে তাকিয়ে

গাড়ি চলন্ত অবস্থায় চালকের সহিত কথা বলিবেন না

১.

আমি অপরাহ্ণ সুসমিতো । বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি ।

২.

আমার কোনো ফলোয়ার নেই,পাবলিক পোস্ট করি না । সকল লেখালেখি শুধুমাত্র বন্ধুদের জন্য।

৩.

সিংহ রাশির জাতক আমি কিন্তু এটার মানে কি জানি না ।

৪.

আমার ল্যাপটপ খুব গোছানো,পরিচ্ছন্ন ।

৫.

আমার কোনো সঞ্চিত ইনবক্স নেই । সপ্তাহে ১ দিন আমি লা রে লা প্পা গান শুনি ।

৬.

বেশ কয়েকবার ঘাস ফড়িং খেয়েছি চকলেট মেখে । আমার বাড়ি কোথায় জানি না । মাকে প্রশ্ন করলে জবাব দেন : ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ

৭.

পৃথিবীতে একটি মাত্র লোককে আমার খুন করতে ইচ্ছা করে : রবীন্দ্রনাথ।

৮.

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আমার খুব পছন্দ,একবার পালং শাক আর সেমাই একসাথে রেঁধেছিলাম খেতে কেমন লাগে দেখতে ।

৯.

আমার পায়ে তিল আছে । ছোট বোন বলেছে আমি নাকি বিদেশ যাব ।

১০.

অনেকেই আমার নামের বানান ভুল করে,আমি কারো নামের বানান ভুল করি ।

১১.

আমার প্রিয় বন্ধুদের জন্ম তারিখ আমার মুখস্থ । তাদের উচ্চতা,তাদের কাদের সাথে ইচিকদানা বিচিকদানা সব আমি জানি ।

১২.

ফোনের রিং আমার খুব অপছন্দ । ৯৯% ভাগ সময় ফোন সায়লেন্ট থাকে । তবে ফোনটা দেখতে খুব সুন্দর । মাঝে মাঝে ফোনের চারপাশ জামা দিয়ে মুছি ।

১৩.

জন্মের লগ্নে আমার মুখে মধুর পরিবর্তে খানিকটা ঠাণ্ডা চা দিয়েছিলেন মা,চা পান করতে করতে আমি সেভ করি,জুতোর ফিতা বাঁধি

১৪.

আমি নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ । ডান পায়ের চেয়ে বাম পায়ে শক্তি বেশি । যখন ছোট ছিলাম তখন ভাবতাম বড় হয়ে মেয়েদের হস্টেলের দারোয়ান হবো ।

১৫.

আমি যখন আমার মায়ের পেটে তখন মা খুব লঞ্চ স্টিমারে ঘুরে বেড়াতেন,বড় হয়ে পৃথিবী বিখ্যাত সমুদ্রগুলো আমি নিজ হাতে স্পর্শ করে সেই ঋণ খানিকটা শোধ করেছি ।

১৬.

 ( বোনাস )

আমার মা রেগে গেলে আমাকে রাঙ্গা ডাকেন । তাঁর ফোন নম্বর আমি রাঙ্গা নামে সেভ করেছি,যখন সে ফোন করে স্ক্রিনে দেখি ‘ রাঙ্গা ইজ কলিং’ । আমি হাঁ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি । আমার চোখ ভিজে যায় ।

জনাব,কিছু ফেলে গেলেন কি

ছোটো বেলায় মাকে দেখতাম গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে,কি করে যেন নামাতেন । আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামে মা’র এ ব্যাপারে সুনাম । কোনো লোকজনের গলায় কাঁটা ফুটেছে,মা’র কাছে এসে হাজির ।

সব ভাই বোনদের বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেলে আমরা দলে বলে নানা বাড়ি আমরা উপস্থিত । তো কাঁটা আক্রান্ত লোকটা মা’র সামনে একটা পিঁড়িতে বসতেন । নানা বাড়িতে তখন হরেক রকমের বিড়াল । মা একটা বিড়াল ধরে এনে লোকটার কাছে এনে বলতো,

: চুপচাপ বিলাইয়ের পা ধরেন । নড়বেন না ।

মা লোকটার গলায় হাত বুলাতে বুলাতে কি যেন বিড়বিড় করে পড়তেন । সাথে লোকটাকে এক দলা ভাত মুঠো করো গোল্লা বানিয়ে দিয়ে বলতো,

: এক ঢোকে গিলা ফালান । চোখ বন্ধ ..

কি যেন হয়তো কাজ হতো । এভাবে মা’র সুনাম বেড়ে যেতে থাকলো ।

একদিন সন্ধ্যায় নানা মহাবিরক্ত হয়ে বাড়ি এসে মাকে দিলেন এক ধমক;

: শোন,তোর এই মাছের কাঁটা নামা পীর ফকিরগিরি থামা । লোকজন আগে আমাগো বাড়িরে কইতো,হাজী সাবের বাড়ি । অহন কয় বিলাই বাড়ি ।

নানী খুব মজা পেত নানার হম্বিতম্বিতে ।

তো,আজ সন্ধ্যায় সখ করে রুই মাছ খেতে গিয়ে ছোট্ট একটা কাঁটা ফুটলো । কি করি আমি ? মাকে ফোন করলাম । বললাম;

: মাগো গলায় কাঁটা ফুটছে ।

: কি কস ? ভালো কইরা শুনতে পাই না । আবার ক

: কাঁটা ফুটছে গলায় । রুই মাছের কাঁটা ।

: ও গলায় রাজাকার ঢুকছে ? বাইর অয় না ?

আমি তো শুনে ৩২ দাঁত বের করি আর কি । জোরে বললাম;

: হ মা ।

: পিচ্চি রাজাকার নাকি বড় রাজাকার ?

: পিচ্চি

: চিন্তার কারণ নাই । কিন্তু অহন বিলাই পাবি কই ?

কোথায় যেন কার স্ট্যাটাসে একবার পড়েছিলাম ফেসবুকে মেয়েদের ছবি’র পরই নাকি বিড়ালের ছবি বেশী পোস্ট করা হয় । আমি দেরী না করে ফেসবুকে চলে এলাম বন্ধুদের ওয়াল খুঁজতে ।

দেখি কার ওয়ালে বিল্লী’র ছবি আছে । আমি ছবিটার পা ধরে বলবো;

: পিচ্চি রাজাকারটাকে গলা থেইকা নামাইতে চাই ।