স্রোতে… স্যান্ড্রা! ফালি ফালি চাঁদ ভেসে যায় – নভেরা হোসেন

১.   কবিতা; শব্দের অন্তর্গত বোধ, নীরবতা, উড্ডীয়মানতা-এসবের  মধ্য দিয়েই হয়তো কবিতার পৃথিবীতে ঝঞ্ঝারত কবিকেঅনুভব করা যায়, তার সময়কে দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকের প্রয়োজন হয় না, কবিতারপাঠ খুঁড়ে নেয় মমি হয়ে যাওয়া  ভাষাকে। ভাষা তার কালকে শব্দ দিয়ে বেঁধে নেয় কবিতায়। কোনো একজন কবির দু-একটা  শব্দ, কবিতারচরণ মাথা ভেদ করে চলে যায়। পাঁজরে বিঁধে থাকে ত্রিশুল হয়ে অনন্তকাল। শামীম কবীর তেমন একজন কবি যার শব্দে শব্দে ইস্পাতের ধার,কেটে নেয় চোখের ঘুম, রাত্রির নিকষতা। নব্বইয়ের আগুনঝরা এপ্রিলে জারুল, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়ারা যখন ফুটছিল শহরের অন্ধগলিতে তেমন এক সময়েই শামীম কবীরের সাথে দেখা, পরিচয়। তরুণ বয়সে বন্ধু হয় অনেকেই, তাদের ভেতরকার ক্ষুরধার, পেলবতা, নির্মাণ করে চলে মানবিক সম্পর্কের স্থাপত্য। দুজন মানুষ পরষ্পরের সান্নিধ্যে আসার পর যখন তাদের অন্তস্থ মানস স্ফুলিঙ্গ নিয়ে জ্বলে ওঠে, সৃষ্টিকরে কবিতা, গান,চিত্রকলা তা এক অনুপম বিস্ময় সৃষ্টি করে, যার মূল্যসময়কে ছাপিয়ে যায়, বেঁচে থাকে মানুষের মনে। এক ঝাঁক তরুণ কবির স্বপ্ন দিয়ে তৈরি নদী পত্রিকার সংস্পর্শে যখন আসি তার আগেই শার্ল বোদলেয়ারের শহুরে ফ্যাকাশে নারীর অবয়ব মাথায় ঢুকে পড়েছিল। তার সাথে ফ্রানৎস কাফকা, আলবেয়ারকামু, সিলভিয়া প্লাথ,জীবনানন্দ, বিষ্ণুদে সব একাকার হয়ে মিশেছিল মন মগজে। তাজুল হক সম্পাদিত   নদী পত্রিকার কবি হিসেবেই শামীমকে প্রথম পড়ি। তাঁর কবিতা-শামীম কবীর, খোঁড়া নর্তকী, যাওয়া, এখানে একজন কবি, ইকারুস,শাসনচিত্র পড়তে পড়তে নতুন এক ঝড়ের সাথে দেখা হয়, যার বসবাস সমুদ্রের নিচের আলোহীন প্রস্তর খণ্ডের হৃদপিণ্ডে। সকলের মধ্যে একজন   হয়ে শামীম আমার বন্ধু হয়ে ওঠে। রায়েরবাজারের টালিঅফিস রোডে আমার এবং  বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাসা মুখোমুখি। সেও এক সময় কবিতা লিখত, নদী পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিল। মামুনের বাসায় চলে বন্ধুদের আড্ডা।  ঐ আড্ডায় তখন অনেকেই আসত। আদিত্য কবীর, ইকবাল এহসানুল কবীর জুয়েল, তাজুল হক, ওয়াদুদ র‌্যানি, তানজিয়া জাহান পলি, স্থাপত্যের ছাত্র বায়েজীদ মাহবুব,মামুন নেসারসহ অনেকেই। আর দশটা আড্ডা যেমন নানা ঘটনা আর দুর্ঘটনায় পূর্ণ থাকে টালি  অফিসের এই আড্ডাটাও ছিল তেমন, তারচেয়ে বেশি কিছু।

২.   বন্ধুদের মধ্যে তখন শামীম, বায়েজীদ, তাজুল, আদিত্য, অভী, মামুনসহ আরো অনেকেই কবিতা লিখত। প্রথম পাঠেই শামীমকে একজন মেধাবী কবি হিসেবে পড়ি। সমসাময়িক অনেক কবি সেসময়ে তার দ্বান্দ্বিক কবিসত্তার পরিচয় পান। অনেককে আড্ডায় দেখা যায় অনেকেই লেখে,সহযাত্রী হয় কিন্তু কেন্দ্রে থাকে একজন। সেই আড্ডা থেকে বেরিয়ে আসে একজন বা দুজন কবি, লেখক, শিল্পী যারা পোড়া মদ আর সেঁকোবিষ গলায় ঠেলে হয়ে ওঠে নীলকণ্ঠ, পাহাড় কেটে বানায় অজন্তা, ইলোরা। শামীমও আমাদের আড্ডার প্রাণ হয়ে ওঠে। ভেতরে ভেতরে অশান্ত কবির অবয়ব কিন্তু বাইরেটা শান্ত, ক্যাটস আই চোখের গৌরবর্ণ ছেলে। কথা বলত খুব কম,কিন্তু খুব ক্ষুব্ধ সে কথা। স্বভাবে কোমল আর কঠিনের সমন্বয়। দু-একদিন মামুনদের উঠানঘেরা টিনের ঘরে রাত হয়ে গেলে শামীম গলা ছেড়ে গান করত-আমার রাজা ঘোরে বনবাসে গো, তারে কেমনে ফেরাই আমার প্রেমেরও নগরে ( কবির রচিত ও সুর করা গান )…অথবা বন্ধু রঙ্গিলা, রঙ্গিলা রঙ্গিলারেআমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলা রে। শামীমের গানের গলা চমৎকার, মাঝে মাঝে সাগর সেন শুনতে শুনতে শামীমের মতো লাগত আবার শামীমের গান শোনার সময় সাগর সেনের কথা মনে পড়ত। রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে আটাশি সালে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এসএসসি তারপর রাজশাহী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এর পাঠ। পরে  একানব্বই সালে এইচএস সি (পরীক্ষা অবশ্য এ কলেজ থেকে দেয়া হয়নি)। তবে শামীম কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী ছিল না। অনেকটা পারিবারিক আর সামাজিক কারণেই যতটুকু করতে হয় করত। অল্প বয়স থেকেই সে ভাবত কবিতা লিখবে আর এই তার একমাত্র কাজ। অল্প কয়েক বছরের লেখালেখির জীবনে বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে সে। দশক যদিও একটা ক্লিশে বিষয় , তবে এখানকার সাহিত্য অঙ্গনে  দশকের অনুশীলন  এখনো অব্যাহত আছে , সে হিসাবে বাংলা অঞ্চলের নব্বই দশকের কবিদের মধ্যে শামীমের কবিতা অন্যতম। অবশ্য কবিকে দশক ধরে দেখাটাও খুব খণ্ডিত একটি বিষয়। সে অর্থে বলতে গেলে শামীম নতুন কাব্যভাষা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। আধুনিক নিঃসঙ্গ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ব্যবচ্ছেদ করেছে সে মর্গের দমবদ্ধ ঘরে। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে ম্যান সাইজ আরশি কিংবা আত্মহত্যা বিষয়ক গল্প মতো কবিতা।

৩. একানব্বই সাল। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট তখন সবে তৈরি হচ্ছে। পাঠকসমাবেশ, সন্দেশ কয়েকটি বইয়ের দোকান গড়ে উঠেছে। মার্কেটের দোতলা আর তিনতলা উঠবার সিঁড়িতেই ছিল মূল আড্ডা। মাঝে মাঝে এমন হতো, সিঁড়ির শুরু থেকে মাথা পর্যন্ত ভর্তি হয়ে যেত অসংখ্য কবি এবং কবিতায়। আসত বিষ্ণু বিশ্বাস, সাজ্জাদ শরীফ,ব্রাত্য রাইসু, মাশরুর আরেফিন, শাহেদ শাফায়েত, আয়শা ঝর্না,জুয়েল মাজহার, ফরিদ আহমেদ অনেকেই। আড্ডাগুলোতে শামীম সবসময় থাকলেও অনেকসময়েই আত্মমগ্ন হয়ে থাকত,পকেটে দু-একটা কবিতা। ভিড়ের মধ্যে সে লিখে যেত। শামীম কবিতা লিখে বন্ধুদের পড়ে শোনাতে পছন্দ করত। আজিজ মার্কেট তখন ছিল আমাদের বাড়ি-ঘর। পাবলিক লাইব্রেরিও। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতাম। বন্ধু তাজুলের বড় ভাই আর্টিস্ট সাইদুল হক জুইসের বাসা ছিল ধানমন্ডি পনেরো নম্বর। সেখানেও আড্ডা হতো। মাঝে মাঝে শাহবাগে মার্কেটের সামনে একা দাঁড়িয়ে থাকত শামীম, তখন তাকে দেখাত একটা লম্বা নাকওয়ালা ধনেশ পাখির মতো। গরম শামীমের সহ্য হতো না, লাল হয়ে যেত, পানি খেত খুব। বুয়েটের তিতুমির হলের ২০৮ নম্বর রুমে বন্ধুদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছে শামীম। তিতুমির হলের গেস্ট রুমেও আড্ডা চলত। বুয়েটের মামুন ভাই, জয়ন্ত ভাই এদেরকে মনে পড়ছে। শামীমের ক্যাডেটের এক বন্ধুও বুয়েটের হলে থাকত, সেখানেও মাঝে মাঝে থাকত শামীম। সোবাহানবাগের ডেন্টাল হোস্টেলে বগুড়ার ও ক্যাডেট বন্ধুদের সাথে বহু সময় কাটিয়েছে শামীম। ৯১-৯৩ এর দিনগুলোতে শামীম এবং আমাদের বন্ধুরা সকলেই চরম বোহেমিয়ান দিন কাটিয়েছি, যা এক দুর্লভ সময়- হয়ে মিশে আছে রক্ত-মগজে। সমসাময়িক কবিদের মধ্যে মাসুদ খান, বিষ্ণু বিশ্বাস, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, মজনু শাহ,রায়হান রাইনসহ আরো অনেকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল ; সে সময়েএকাডেমিক ডিগ্রী না নেওয়ার বিষয়ে শামীম মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল আর সকল ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বলয় থেকে বাইরে থাকতে চেষ্টা করত। সাহিত্যও সে করতে চাইত যেখানে খুব স্বাধীনভাবে লেখা য়ায়, যা শিল্পোত্তীর্ণ তেমন কাগজে, লিটল ম্যাগাজিনে। কবিতার ধ্যানে নিমজ্জিত হয়ে থাকত সে,ভাষার প্রেমে, শব্দের প্রেমে। নিবিড়ভাবে তা ঘটে চলত তাঁর ভেতরে এবং খুব স্বাভাবিকভাবে। কোনো আরোপণ নয়, এমনকি কবিতা লেখাকে সে বিশেষ কিছু ব্যাপার মনে করত না। কেউ ঘুড়ি ওড়ায়, কেউ কাঠ ছাঁচে, কেউ রান্না করে এরকমই বা কেউ পদ্য লেখে। মানুষের মৌলিক ঘটনাগুলোর একটি। শিল্প নিয়ে কচকচানি শামীম সহ্য করতে পারত না বলে লোকসমাগম থেকে দূরে থাকত। লেখালেখির পুরো বিষয়টাই তার কাছে খুব সাধারণ ও সহজাত এবং তা আবহমান গ্রন্থি থেকে গ্রন্থিতে ও বিষয থেকে বিষয়ান্তরে বিরাজমান-এই ছিল তার অভিপ্রায়। বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলোতে শামীমের মধ্যকার বোহেমিয়ান শিল্পীর সাথে দেখা হয় যে ভেতরে ভেতরে নরম তুলোর মতো উড্ডীয়মান, নিমগ্ন নিজস্ব কল্পনার জগতে- যেখান থেকে উঠে আসত শব্দ, বিভাস, বিভাসিতধ্বনী। অতর্কিত একটি পিছল কাঁখ/ আমাকে বহন করে/ যুদ্ধের বাহিরেএকা অনবদ্য কন্যকায়/ মিঠা সংগঠন/ একটি অচল মগজের মোম আজ আরো/ সত্যি সত্যি জ্ঞানী হ’য়ে ওঠে-এইসব চিত্রকল্প তাঁর কবিতায় তৈরি হতে থাকে। যা শুধু শব্দ নয়, বাক্য নয় এর মধ্যে কবি সন্তরণরত, আকন্ঠ নিমজ্জিত। করাত দিয়ে পা কাটবার দৃশ্য দেখবার মতো ঋজু কবি অনন্তর যাত্রা করেছিল অধরা কবিতার পৃথিবীতে আর তাই বুঝি কবিতার সাথে ক্ষণিকের বিচ্ছেদ তাঁকে করে তোলে নৃশংস। হ্যাঁ নিজের প্রতি। কী ভীষণ অস্থিরতা যে নিজেকে এখনও স্থির কাঠির মতো দেখে নিয়ে মাপতে পারলাম না/ আর একটা বিশাল করুণ ঘণ্টার মতো একটা মহা কৌতুক লেগে আছে আমার চোয়ালে, কণ্ঠায় বুকের ওপর দুই পাঁজরে/ যাকে প্রাণপনে ভালোবাসি তাকে ভালোবাসতে না পারা-এই ছিল কবির নিদারুন যন্ত্রণার উৎস।

৪. মালিনীকে জল তুলে দিতে হলে বাগানেই রাত্রপাত হবে। সহস্র বছর আর তারও অধিককাল নিদ্রা গেলেও রাত্রি জেগে থাকে, অনন্তকাল তার ডানা ঝাপটানো। মাথার ভেতর খেলা করে লক্ষ লক্ষ উঁইপোকা। তাদের অন্ধ হওয়ার গল্প সবার জানা। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে রাতের সকাল, সকালের রাত্রি। শামীম কবীর কবিতায় যে ভূ-খণ্ডে বাস করেছেন তা খানিকটা লবন দিয়ে পোড়া কিন্তু তিতকুটে নয় মুখে দিলে সাই করে একটা তরিৎ-প্রবাহ শিরা-উপশিরায় রক্ত-সঞ্চালন, একঝলক উষ্ণতা। তবে গ্লাসিয়ারের নির্মম শীতলতাও ভর করে তার কবিতায়। এটা অনেকটা যুদ্ধের দিনে ট্রেঞ্চের নীচে পথ খুঁজে বেড়ানোর মতো। হাঁটছো, হাঁটছো চারদিকে ধোঁয়ার কুণ্ডুলি, মরকলাগা ইঁদুর,পচা দুর্গন্ধময় গলিত মানুষ। এভাবেও চলতে থাকে কালের চাকা, সে কখনো নিজের ডানায় জুড়ে দেয় বিদ্যুতের আলো কখনো ভেঙে ফেলে কাচের তৈরি হাতদুটো, যে হাত তাকে লাঙলের ফলা ধরতে শেখায়। রং নং রং নয় রক্ত ঝরিতেছে। এই রং লাল,এই রং সবুজ, এই রং বর্ণহীন। হ্যাঁ শামীমের কবিতায় সে রঙের দেখা পাওয়া যায়। পাতার নীচে যে অন্তর্জাল সে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শিল্পীর আঁচড়ে কখনো কবিতার অক্ষরে। জন্ম এবং মৃত্যৃ।  এদুটোই অপরিহার্য মানে এটা একটা চক্র, চক্রায়ন, চক্রমন। ছোট শিশু একদিন পক্ককেশ তারপর তার এপিটাফে লেখা থাকে এমন সব ঠিকানা যা ঐ মুহূর্তের তাকে চেনায় না। শামীম কবীরের কবিতায় এই ঘূর্ণন খুব নির্বিকারভাবে সন্তরণশীল। তাকে বলতে দেখি-

একটি পাতার একটি জীবন

গজায় বা ফোটে

তারপর বাতাস থেকে কয়লা বনের গ্যাস নেয় গ্যাস

উড়ন্ত ঝিরিঝিরি বল্লম ফলার মতো

প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী আড়াআড়ি দেখে

তারপর মূল পথে পানি টানে

আর স্ফীত হয়

(প্রাকৃতিকদৃশ্যাবলী)

অন্যত্র

একদা সেখানে ছিলো নীরবতা

(এবং)ছিলো নিবিড়তা

একজন দুইজন আর কিংবা তিনজন

ক্রমে লোকালয় সরে গ্যাছে।

(আরোএক টুর্নামেন্ট)

এই হচ্ছে শামীমের কবিতার দ্যোতনা। একই সাথে সময়ের ভেতর সময়ের মন্ত্রণা। কুঁজো খেজুর গাছের স্মৃতি ভাসে তার মনে যেখানে আজ দাঁড়িয়ে আছে ঠনঠনিয়ার এপিটাফ। যেখানে লেখা আছে-

 জ্ঞানী কবরের স্কন্ধে চরে ফিরে এখানে এলাম

ছোটো ছোটে অট্টহাস্য মাখা ধুলা ঘাস ও বাতাস

এখানের এই নাম অন্যপুর নিহিত রেখেছে

থাবন্ত আগুনে ছাওয়া এ যে সেই খাঁ খাঁ পারগেটরী।

 (মা’রসঙ্গে বাক্যালাপ)

শামীমের কবিতায় শব্দ নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে, ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দের ভেতরের দুয়েন্দে শব্দ ফুঁড়ে অন্য এক অর্থের ডাইকোটমিতে পরিভ্রমণশীল।

তুমি কি জ্যান্ত? তোমাকে বলেছি চমকাও।

আলতার দাগে ভরে গেছে নীল মুখটা

চারদিকে ওড়ে উদ্ধোধনের ঝিলমিল তাতে ছটা নেই

চারদিকে ভাসে নাকি বমোন

এমন সব কথার জালে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কবির পৃথিবী যেখানে সে নিজেই তৈরি করে চক্রবূহ্য। এই চক্রে আবর্তিত হতে হতে কবি হয়ে ওঠেন ধারাল পৃথিবীর মতো সর্পিল। তার ভাষা আর কবিতা কেটে ফেলে গত শতকের লাল গালিচাকে যেখানে পশমের ভাঁজে লুকানো থাকে গোলাপ পাপড়ি, তারাখচিত বসরাই ঝালর। নিজের তৈরি চক্রবূহ্যকে ভেঙে কবিকে হাঁটতে দেখি খোলা প্রান্তরে যেখানে রেডিয়োতে গান বাজছে-

যে মতে ধুলার স্মৃতি হলো ছারখার

সে মতে ফিরিলা তুমি ফিরিলা আবার

অশরীরী পুড়ে খাক শরীরী অনলে

আর তার বায়ুঘের ধিকি ধিকি জ্বলে

(রেডিয়োতে গান)