সারওয়ার চৌধুরীর চারটি কবিতা

এক লালরঙ কুটুমিতা

কোনোএক
আলটিমা গ্রহের বলয়ে
ধীরে ধীরে ডুবে যায়
অচিন পাখির গান।
সেখানেও পাখি থাকে? থাকে সেখানেও না-থাকার গান? নিজের ফুর্তিকেও ঘুম পাড়ায় কেউ সেইখানে? পারে সহজে?
সহজে নির্ঘুম নক্ষত্রের চোখের ভিতর, জেগে থাকে কি পৃথিবীর কোনো পরীর প্রণয়? তিন হাজার গ্রহের চক্কর পার হয়ে, আলফা সেন্টরির ওইপারে, আরও দূরে, মানুষ ও প্রেম স্তব্ধ থাকবার ঘর কি থাকে?

সেই ঘরে, সেই ঘরের পরিপ্রেক্ষিত ঘিরে থাকে দুঃখিত চেহারা — লালরঙ কুটুমিতা, এমন কুটুমিতা, হয়ত আমাকে থির করে, ভাসতে থাকে ভাষার বাইরে; পৃথিবীর দিনরাত্রির ভিতর অবিরাম…

এই ভূপ্রকৃতির ভিতর শাদা কালো লাল নীল দুঃখই অন্তর্নিহিত সংগীত।

চ্ক্কর

ঘুরেফিরে আসে একই সূর্য
দিন রাত্রী
একই সুরে নতুন শিশুর কান্না।
ঘুরেফিরে আসে একই প্রেম
ঘর ও দুয়ার
ধানক্ষেত, নতুন বউ,
হাসিখুশি, সাত রঙ, পান্না।

ঘুরেফিরে আসে পাখিদের গান
সতেজ সকাল
একলা দুপুর ও আর্তি।
ঘুরেফিরে আসে মান অভিমান
নিরিবিলি দুখ, ঝলমলে সুখ
ঘ্রাণ ও স্নেহের ডাক বাড়তি।

ঘুরেফিরে আসে রাস্তার ধূল্
ঘাসফুল
কানফুল
বর্ষার ঢেউ, শরৎ সুন্দর
লিলুয়া ধ্বনি ও কান্তি।
ঘুরেফিরে আসে ঝগড়া-ফসাদ
দণ্ডবিধি
ভণ্ড চতুর
সত্য মিথ্যা হত্যা যুদ্ধ
শরণার্থী ও শান্তি।

ঘুরেফিরে আসে গুনগুন দিন
জন্মের ঋণ, সাপুড়ে ও বীণ
পাহাড় নদী
বাঁশি ও বিরহ
মহুয়ার বন— অম্লমধুর স্মৃতি।
ঘুরেফিরে আসে হারজিত্ খেল্
কমলা ও বেল্, চামচার তেল
বৃশ্চিক জোশ
স্বভাবদোষ ও বর্ণবাদের প্রীতি।

বৃষ্টি ও পাখির ডিম

বৃষ্টি পড়তেছে পাখির ডিমে।
যখন পড়ে, তখন পড়েই
কিন্তু পড়তেছে দেখতে দেখতে,
দেখি, বৃষ্টি ডিম ছুইতেছে ঠিক
তবু পাখির ডিমে বৃষ্টি পড়তেছে না।

ডিমের ভিতর শুধু ডিমসকল
বুঝতেছে, বৃষ্টি ডিমের অন্তর ছোয় নাই।

পাখি ক্ষেপনাস্ত্র হয়ে আসতে আসতে
গাছের ডালে তার বাসার কাছে
পাখি হয়ে বসছেন। দেখছেন কোথাও
ট্রাম্প সৌদি ইসরাইল চিন রাশিয়া আছে কীনা।

নাহ নাই। থাকলেও নাই
সব সময় ওরা সবকিছু দেখবার ক্ষমতা নাই।

পাখি ছু মন্তর ছু দেন নাই
পাখি লাগ ভেলকি লাগ ধান্দা দেন নাই।

বসছেন টপাটপ তার
তিনটি ডিমে।
তিনটি— বর্তমান অতীত ভবিষ্যত।

ওম দিয়ে মোছেন
বৃষ্টির ছোঁয়া, সরি বলেন—
‘প্রিয় ত্রিকাল ডিম, সরি
আসতে আসতে কয়েক ফোঁটা
ঠোকর দিছে বৃষ্টি, সরি!
খাইতে ত যাইতে হয়, কি করি বল্!
না খাইলে ওম পাবি না রে যাদু!’

ডিমের ভিতর থেকে ডিমসকল বলেন—
‘তোমার মায়া আটকায়া দিছে মা
বৃষ্টি আমাদের ছুইতে পারেন নাই।
আমরা জন্ম নিবই, আমরা জন্ম নিবই।
বৃষ্টিও জন্ম নিবেন তোমার মায়ার মতন।’

ওর কাছে আমার হুরুবেলা

ওর চোখের হাসির নাম—
আশাবাদ
পৃথিবীর ডানা
রাস্তার শূন্যতা।
কোনোদিন সত্যিই দেখে ফেলতো নদীর ডানা ভাঙ্গা।
সেদিন নিজেকে মনে করতো শূন্যস্থান।

একদিন বলেছিল—
গদ্য আর পদ্য থেকে
গ আর প তুলে নাও,
যেকোনো একটা শূন্যস্থানের গপ শুরু করলেই
আমাদের ভালবাসা শুরু হয়ে যাবে।

একবার এক বনের বেড়ার দু শ পৃষ্ঠা নীরবতা পড়ে চলে গিয়েছিল ইতিহাসের দিকে। ইতিহাস কেউ বললেই সে মনে করত হিরামালীনি আসছেন, দ্বিজবংশী দাশ আসছেন, মায়া আসছেন পথে।

বহু মতের সৌহার্দ্য দেখতে ফুলফুলা দুঃখ নিভিয়ে দিত; ঘ্রাণ হতে চাইত চৌদিকের।

আমি গাছের ছায়ার মতো তাকে ভালবাসা দিয়ে অস্ত গিয়েছিলাম। সে জানে না আমার হুরুবেলা তার কাছে রয়ে গেছে।