ভদ্রলোক পিল খেয়েছিলেন -আখতার মাহমুদ

পুলিশ ভদ্রলোকের ঝুলন্ত লাশটা দড়ি কেটে নামানোর আগে, অর্ধশত টিভি চ্যানেলের নিউজ রিপোর্টাররা নেকড়ের মত ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে জিভ বের হওয়া মৃত মুখ লাইভে প্রচারের প্রতিযোগিতারও আগে, বিষয়টা মন্ত্রীসভায় আলোচনারও ঢের আগে, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এবং ‘দৈনিক গরম খবর প্রতিদিন’ পত্রিকার প্রথম পাতায় মুখরোচক শিরোনাম হবারও অনেক আগে, ফেসবুকে খবরটা ভাইরাল হয়ে লাখ লাখ শেয়ার হবারও কিছু আগে, এমনকি বিবাহ বার্ষিকীর মাত্র তিনদিন আগেও ভদ্রলোক ছিলেন শান্ত-একনিষ্ঠ স্বামী, কঠোর অনুশাসন মেনে চলা কর্পোরেট চাকুরে এবং নিয়মিত ট্যাক্স দেয়া সুখী নাগরিক।

ভদ্রলোকের একটা বিশেষ অসঙ্গতি ছিল এবং অসঙ্গতিটা ঠিক মেনে নেবার মত নয় এ কারণে যে, একজন সভ্য মানুষের মানবিকতা-সামাজিকতা ধারণ-লালন এবং চর্চায় এ অসঙ্গতিটা- বিশেষ করে আজ এই ২০১৭ সালে সভ্যতার শিখরে দাঁড়িয়ে মেনে নেয়া একেবারেই অসম্ভব যে, ভদ্রলোকের ফেসবুক একাউন্ট ছিল না; -এই দোষটুকু এড়িয়ে গেলে অবশ্যই দেখা যাবে যে তিনি একজন ভদ্রলোক এবং তার উন্নতি ও কঠোর চাকুরিবিধি মেনে প্রতিটা কর্পোরেট আচরণের প্রতি লোকের নিন্দার চেয়ে মূলত গোপন ঈর্ষাই ছিল বেশি।

অন্যেরা কাজে-কর্মে তার মতো একনিষ্ঠ নয় বলেই পেছনে পর্যাপ্ত সমালোচনা অস্তিত্বশীল ছিল অধস্তন-ঊর্ধ্বতন উভয় পক্ষেই এবং তার নিয়মতান্ত্রিক যৌক্তিক আচরণ অসহনীয় ছিল বলে বন্ধুমহলে খুব একটা সমাদর ছিল না; একইভাবে তার নিয়ম-শৃঙ্খলা, যে কোনো ঘটনার নিরাবেগীয় বিশ্লেষণ আত্মীয়দের মাঝেও তাকে অজনপ্রিয় করে রেখেছিল কেননা ভদ্রলোক ভাবতেন কিংবা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন- মানুষ সাধারণত ব্যক্তিস্বাধীনতা-বাকস্বাধীনতার নাম করে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ভালবাসে, আবেগে উচ্ছ্বসিত-শিহরিত হতে ভালবাসে, অনবরত ভুল করেও সহানুভূতি কামনা করে অদ্ভুতভাবে শুনতে ভালবাসে- মানুষ মাত্রই ভুল, পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ইত্যাদি… যদিও মহাবিশ্ব-পৃথিবী-প্রকৃতি-রাষ্ট্র-সমাজ সবকিছুই নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট নিয়মতন্ত্র অনুসরণ করে- মানবিক মানুষেরা ব্যতীত; ফলে, অনিয়মে অভ্যস্ত মানুষেরা চিরকাল নিয়মতান্ত্রিক মানুষদের দেখে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, সমালোচনা করে গোপন ঈর্ষাবোধে।

বিস্ময়কর ঘটনাটা যেদিন ঘটে সে-দিন বৃহস্পতিবার ছিল; যদিও কেউ কেউ দিনটাকে বউবার নামকরণ করে থাকে, বিশেষ করে গ্রামে-মফস্বলে বউ রেখে শহরাঞ্চলে চাকুরি করা সক্ষম পুরুষেরা নিজ নিজ নারীর উদ্দেশ্যে রওনা করে থাকে বৃহস্পতিবারেই আর এই দিনেই শহর থেকে বেরুনোর পথগুলো কী করে যেন সরু হয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে সারি সারি বাস-ট্রাকদের, এদের সাথে ‘প্রলম্বিত বিরহ’ ধোঁয়ায়-গরমে-ধুলায় কিংবা কখনো তীব্র শীতল কুয়াশায় বা তীব্র বৃষ্টির বড়-ছোট ফোঁটায় মিলেমিশে ভাসতে থাকে হাইওয়েতে এবং দীর্ঘযাত্রা-যানবাহনের স্থবিরতা-ক্লান্তি-সপ্তাহ বা মাসের দীর্ঘ বিরহ সত্ত্বেও এদের আচ্ছন্ন করে রাখে সামনে পড়ে থাকা সুখানুভূতি, কেননা তারা সহজাতভাবেই জানে- বৃহস্পতিবারের রাতগুলো দীর্ঘ আর ঘুমহীন হয়ে থাকে।

সেই রাতটাও দীর্ঘ ছিল আর ছিল ভ্যাপসা গরমের দাপট আর ছিটেফোঁটা বাতাসও ছিল না যেন পৃথিবীর কোনো কোণে, তবু বাতাসের অপেক্ষায় জানালায় দাঁড়িয়ে ভদ্রলোক লুঙ্গি ঝুলিয়ে নিজেকে বাতাস করতে করতে হিসেব করছিলেন তিনদিন পরে দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে বউকে কী গিফট করা যায় এবং কতটা কার্যকরী পন্থায় বউকে খুশি রেখে খরচ না বাড়িয়ে বিবাহ বার্ষিকীর উৎসব সেড়ে ফেলা যায়- সেই হিসেবি ভাবনার মুহূর্তেই লোডশেডিং-এ ভদ্রলোক বিরক্ত হন, কেননা সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে সি.এন.জি-রিক্সা না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘেমে-নেয়ে হেঁটেছেন আর এখন লোডশেডিং-এ বাসায় বসে আবারো ঘামছেন- তবে অস্থির হবার মত মানুষ নন বলে ফ্রিজ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানির অর্ধেকটা খেয়ে নিজেকে সুস্থির করে বসেন বউয়ের পাশে; বউ অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিল চোখ বন্ধ করে আধশোয়া হয়ে- এ সময়টাতে বউ কোনো আলাপ পছন্দ করে না; ফলে, মিনিটখানেক বসে ভদ্রলোক উঠে গিয়ে আবারো জানালার পাশে দাঁড়ান আর তখনি বুঝতে পারেন ঘামে-গরমে হুট করে ঠান্ডা পানি খাওয়া অনুচিত হয়েছে; জ্বর জ্বর অনুভব করছিলেন সেই বিকেল থেকেই এখন সেই ভাবটা আরো তীব্র হয়ে উঠছে দেখে একটা নাপা ট্যাবলেট খাবার জন্যে ঔষধের বাক্স খুলে নাপার বদলে ভুল করে বউয়ের জন্মবিরতিকরণ পিল খেয়ে ফেলে হতচকিত হয়ে পড়েন ভদ্রলোক।

বিষয়টা এতই আকস্মিক ঘটে যায় যে, বুঝতে পারেন না কেমন করে এমন ভুল হয়ে গেল… এমন নয় যে ট্যাবলেটগুলো দেখতে প্রায় একইরকম, তবু কী করে এই অসম্ভব ব্যাপার ঘটে গেল সেটার দিশা না পেয়ে ভদ্রলোক বিমর্ষ হয়ে নিজেকে কারণ অনুসন্ধানে নিয়োজিত করে উপলব্দি করেন- সম্ভবত আজ যে বৃহস্পতিবার সেটা মাথায় ঘুরছিল সেকারণেই হয়তো বৃহস্পতিবারের পিলটা খেয়ে নিয়েছেন তিনি অথবা লোডশেডিং-ও কিছু মাত্রায় দায়ি হয়ে থাকতে পারে…. অনুসন্ধানের ফলাফলে তৃপ্ত হয়ে বিমর্ষতা ঝরে পড়ে তার মুখ থেকে এবং তিনি হাল্কা হয়ে খুবই সাধারণ ব্যাপার হিসেবেই নেন এটাকে, কেবল একটা বিষয়ে মন কু গাইতে থাকে যে, পিল খেয়ে ফেললে পুরুষের শারীরিক কোনো অসঙ্গতি ঘটে বসে কী-না… তবে যৌক্তিক মানুষ হিসেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেন- এ বিষয়ে অপরিচিত কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

খাবার টেবিলে ভদ্রলোক হালকা সুরে পিল খেয়ে নেয়ার বিষয়টা বউকে জানালে শুনে যারপরনাই তাজ্জব হয়ে নিশ্চিত করে বউ জানায়, পুরুষের জন্মবিরতিকরণ পিল খেয়ে ফেলার ঘটনা পৃথিবীতে সম্ভবত এই প্রথম ঘটেছে, কেননা এরকম কখনো কোথাও শোনা যায়নি; আর স্বামীর এমন দায়িত্বহীন কাজে ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়েন ভদ্রমহিলা এবং খাবার পর ছোট বোনকে ফোন করে বিষয়টা অবহিত করেন- প্রথমে ক্ষোভে-বিরক্তিতে পরে হাসতে হাসতে; ছোট বোনটি সাংবাদিকতা পড়ছে এবং তার লেখার হাত ভালো বলে সে ফেসবুকে ঘটনাটি হুবহু লিখে পোস্ট দেয় আর তার ফলোয়ার হাজার দশেক হওয়ার পরও সেই পোস্টে একরাতেই অবিশ্বাস্যভাবে লাইক পড়ে লক্ষাধিক আর হাজার হাজার শেয়ার হয়ে যায় সেটি আর মন্তব্য আর রিয়েকশানের হিসেব করে কুলিয়ে ওঠা তার পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে এবং সাংবাদিকতার ছাত্রী হিসেবে শ’খানেক সাংবাদিক তার বন্ধুতালিকায় থাকায় খবরটা সমস্ত দেশে দাবানলের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়েই।

যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উৎকর্ষতার ফলে ভদ্রলোকের পিল খাবার সংবাদ দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে এবং তার আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশিদের নিকট পৌঁছে যায় শনিবার মধ্যরাত নাগাদ এবং ফেসবুকে সকলেই এটিকে নিজ নিজ দর্শনে বিচার করতে থাকে:
একজন আইনবিদ মন্তব্য করেন- এমনতর কাজে আইনি নিষেধ নেই; একজন প্রকৌশলী জানান- এটা অবিশ্বাস্য, এমনটা হতেই পারে না, ফলোয়ার বাড়ানোর জন্যে এমন পোস্ট দেয়া হয়েছে; একজন ডাক্তার নিশ্চিত করেন- পিল খাওয়ার ফলে ভদ্রলোকের শারিরীক সমস্যা হবে না; একজন আইটি বিশেষজ্ঞ জানান- ভদ্রলোকের সিস্টেম হ্যাং করে যাওয়ায় পিল খাবার বিষয়টা ঘটে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে ভদ্রলোক পাবনা গিয়ে সিস্টেম ঠিক করিয়ে নিতে পারেন; একজন সাইকোলজিস্ট মত দেন- ভদ্রলোক সম্ভবত জেন্ডার ডিসফোরিয়াতে ভুগছেন; একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ জানতে চান- কোন কোম্পানীর খাইছে, স্কয়ারের না বেক্সিমকোর;  একজন তরুণ রক্তগরম শিক্ষক বলেন- এটা এখন থেকে ঘনঘন শুনতে পাব আমরা, অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রথমবার কেউ না কেউ শুরু করে পরবর্তীতে ছাগুমার্কা অনেকেই এটি অনুসরণ করবে; একজন সমাজবিদ জানান- এটা সামাজিক অবক্ষয়ের এক করুণ চিত্র মাত্র; একজন এন্টি নাটালিস্ট সিদ্ধান্ত দেন- আমি মনে করি এই দুনিয়ায় একজন মানবিক শিশুরে আনাটা অনৈতিক এবং এই পঁচা দুনিয়ায় তারে আনাটা ক্রাইম… ফলে পিল খুবই দারুণ একটা ব্যাপার কিন্তু লাইগেশনটা সবচাইতে ভাল পন্থা; একজন জনপ্রিয় পুরুষ খেলোয়াড় লিখেন- আমরা দেশের জন্যে খেলে খেলে রাত-দিন এক করছি আর ভদ্রলোকেরা আরামে পিল খেয়ে বেড়াচ্ছে; একজন গৃহিণী প্রশ্ন রাখেন- আশ্চর্য, পুরুষ মানুষ নাপা ভেবে পিল খাবে কেন, নাপা আর পিল তো দেখতে এক না এখন ভদ্রলোক যদি কখনো বাবা হতে না পারেন কে দায়িত্ব নেবে আর বউটা বোধহয় কেয়ারলেস… সেন্সিবল মেয়েরা যেখানে সেখানে বার্থ কন্ট্রোলের পিল ফেলে রাখে না; একজন মাদ্রাসার ছাত্র ফতোয়া দেন- জেনে-বুঝে খেলে ভদ্রলোককে তওবা করে কাফফারা দিতে হবে, আর ভুলবশত খেলে শুধু তওবা করলেই চলবে; একজন নারীবাদী বলেন- পুরুষরে বিশ্বাস নাই, এরা আজ পিল খাচ্ছে কাল বাচ্চার খাবারেও ভাগ বসাবে গায়ের জোরে; একজন লেখক স্ট্যাটাস দেন- এই বিষয়ে ভাল একটা কমেডি নাটক হতে পারে; একজন গায়ক এই প্রসঙ্গে অপ্রাসঙ্গিকভাবে লাইভে গাইতে শুরু করেন- হায়রে মানুষ, রঙীন ফানুস…; একজন অভিনেত্রী জানতে চান- পিল দেখতে কেমন হয়; একজন সাংবাদিক জানান- বিষয়টা আরো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে; একজন তরুণ ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন- পুরুষদের জন্যে পিল থাকলে বেচা-কেনা ভাল হইতো; একজন অতি উৎসাহী ফেসবুকার ইন্টারনেট ঘেটে কী করে যেন ভদ্রলোকের ছবি আবিষ্কার করে সেটা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দেয়- এই লোকটাই পিল খাইছেন; দিনে পনেরোটা স্ট্যাটাস দেয়া একজন কবি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন- শুনেছি ভদ্রলোকের নাকি ফেসবুক ছিল না… এই যুগে এমন পিছিয়ে পড়া একজন মানুষ পিল খেয়েছে এ আর বিচিত্র কী।

ফেসবুকের বাইরে মন্ত্রীসভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা থেমে থাকে না: মন্ত্রীসভায় বেশ হালকা সুরে একজন হেভিওয়েট মন্ত্রী মন্তব্য করেন- পাবলিক এত খেপল ক্যান, বেচারা ভুল করে খেয়ে ফেলছে হয়তো… অন্য এক হেভিওয়েট মন্ত্রী পূর্বোক্তজনকে হাস্যস্পদ করার নিমিত্ত দরাজ গলায় হেসে প্রশ্ন রাখেন- আপনিও খাইছেন না-কী ভুল করে কোনোদিন; -এই রসিকতায় প্রায় হাতাহাতির সূত্রপাত হতে গিয়েও হয় না প্রধানমন্ত্রীর আগমনে।

ভদ্রলোক রবিবার অফিসের জন্যে বাসা থেকে বেরিয়েই টের পান চারপাশের সবকিছু বদলে গেছে; এলাকার মুদি দোকানদার, সবজি বিক্রেতা এমনকি রিক্সাওয়ালারাও ঘুরে ঘুরে তাকে দেখছে- মুচকি হাসিতে; অফিসে গিয়েও দেখেন অধস্তন থেকে ঊর্ধ্বতন কেউ কেউ হাসছে, কেউ অবাক চোখে তাকাচ্ছে বারবার, কেউ তাকাচ্ছে সহানুভূতির চোখে; ভদ্রলোক শেষতক তার ব্যক্তিগত পিয়নের মুখেই জানেন তার পিল খাওয়ার খবরটা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে; স্মার্ট পিয়নটি ফেসবুকে ঢুকে ভদ্রলোককে দেখায় মানুষেরা কে কেমন ভাবছে বিষয়টা নিয়ে, কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের খোঁজও দেয় যেখানে খবরটা গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে; সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পাতাতেই ছেপেছে- ‘দৈনিক গরম খবর প্রতিদিন’, তাদের পত্রিকার সার্কুলেশন ভাল বলে প্রায়শই তারা নিজেদের বড় পত্রিকা বলে দাবি করে থাকে যদিও প্রায় দিনগুলোতেই তাদের ১২ পৃষ্ঠার পত্রিকার ৬ পাতা জুড়েই থাকে বিজ্ঞাপন…..

হঠাৎ করে পৃথিবীটা বিস্বাদ লেগে ওঠে ভদ্রলোকের তবু তিনি নিষ্প্রাণ চোখে পড়ে চলেন অসংখ্য মন্তব্য, অনলাইনের সংবাদগুলো… দুপুরে অফিসের বস ডেকে বিনা নোটিশেই সাময়িক বরখাস্তের কাগজ ধরিয়ে দেন তাকে; কাগজে জানানো হয়- মানসিক ডাক্তারের পরামর্শমতে মাসতিনেক চিকিৎসা করিয়ে সুস্থতার সনদ নিয়ে এলে চাকরিতে ভদ্রলোককে পুনর্বহাল করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে কোম্পানীর ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আরো মাসখানেক থাকতে হবে, কেননা একজন কর্মকর্তা- যিনি পুরুষ হয়েও স্ত্রীর জন্মবিরতিকরণ পিল খেয়ে ফেলেন তিনি যথেষ্ট মানসিক দৃঢ়তা রাখেন না; ফলে, তাকে আর যাই হোক, কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যায় না; এছাড়াও বিষয়টা স্পর্শকাতর আর কোম্পানীর সুনামের পক্ষে ক্ষতিকারক বিধায় তাকে বিনা বেতনে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা গেল।

সবকিছু এত দ্রুত আর ক্ষিপ্রতায় ঘটে যায় যে, ভদ্রলোক মোবাইল বের করে একবারও হাতে নেবার সুযোগ পান নি, মনে পড়তেই মোবাইল বের করে দেখেন সাইলেন্ট মুডে রাখা মোবাইলে প্রায় শ’পাঁচেক মিসডকল আর শ’খানেক মেসেজ এসেছে; ভদ্রলোক নিয়মিতভাবে রাতে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমান আর অফিসে এসেই মোবাইলের গলায় স্বর ফিরিয়ে দেন, কিন্তু আজ বিস্ময় কাটিয়ে উঠে মোবাইল হাতে নিতেই দুপুরে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে; মোবাইলে মিসডকলগুলো যখন চেক করছিলেন তখন তার হাতে ধরা অফিসের সাময়িক বরখাস্তের চিঠি; মিসডকল গুলো প্রায় সবই নিকট আত্মীয় আর বন্ধুদের এবং তার স্ত্রী’র, মেসেজগুলোও; মেসেজ পড়তে পড়তে ভদ্রলোকের দু’চোখ রক্তলাল হয়ে ওঠে, বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি, তবু প্রায় সবগুলো মেসেজ পড়েই ওঠেন আর নিজের দায়িত্বে থাকা জরুরি কাগজপত্রগুলো অন্য একজনকে বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে শান্তভাবে বেরিয়ে পড়েন এবং চমৎকার সোনালি বিকেলবেলায় সরাসরি বাসায় ফিরে সিলিংফ্যানে দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়েন কোনো সুইসাইড নোট না রেখেই।