সাঁই – কথন – জাগরী ব্যানার্জী

১/ সার

—মউলের দল যখন সার বেঁধে উপুরঝুপুর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে লুঠ – কম্মে যায় …।

—লুঠ – কম্মে ?

—লুঠ কম্মে ছাড়া কি বল দিনি মামন ? পোকামাকড় , লতা – গোসাপ , ফড়িং জোনাকি সগলটির খাদ্য ভগমান রেকেচেন কি না? বলি রেকেচেন তো ? অ্যাগ মাত্তর এই মনিষ্যি , এই মনিষ্যি গুনোর জন্যি তিনি কুন খাদ্য সরিয়ে রাকেন নি । কেন রাকেন নি ? না তিনি জানেন , এ এয়াদের আলাদা করে কিচু রাকতে হবেনি। এ হল রক্ত চোষার জেত । পরের খাদ্য কেরে -কুমরে খাতে অস্তাদ ! এদের আবার আলেদা কি লাগে কও দিনি ?

—তা বটে ! ভুল বলনি !

—না ফুলির কাচে অবিচার নেই কো মামন । বল দিকি কুনটা আমোরা বানায়ে খাই ! ইয়ার মাংস , উয়ার ফলটা তেয়ার পাকুড় টা , কুন টুনি টুনি পোগা কুন পাদাড়ে আদাড়ে গিয়া এট্টুন এট্টুন রস জমা করতেছে , খাবলে আনার সন্দান ঠিইইইইক জানতিছে ইয়ারা । নয় কি কও ? ফ্ল্যাট , ফ্ল্যাট এর জানলায় জাল । মশা আসেনা তাতে । টব এ দুটো ক্যাকটাস , আর বসার ঘরে ফেং শুই এর বাঁশ । বাঁশ গাছে ফুল হয় না । তাই শিশু সেই গাছ গুলোর গোড়া রাংতা ফিতে বাঁধা । লাল চকচকে রাংতা ফিতে ।

—কে কইল মামন ! হেহ্ ! হয় ! একেনে কেউ দেকেনি তাই , লয়তো হয় । বাঁশ গাচে ধরে গো ! সোন্দর ফুল ধরে ! আর তার কি গন্দ ! এক্কেবারে বেয়াকুল গন্দ গো মা !

—ভ্যাট ! তুমি না কাকিমা , যা খুশি তাই ‌নাকি ?

—অই দ্যাকো না বলতেচি না যদি হয় আমার নাক কেটে নেও তুমি ! সগগল গাচেরই হয় , কারু দেকা যায় কারু দেকা যায় নে । অম্নি বাঁশেরও হয় । তবে সে ফুল সব্বনেশে । হলি ই মড়ক , আর মড়ক যদি বা না হল তো গাদাগুচ্চের মনিষ্যি নেবে বড় রায় ! আর সে ফুল ঝদি জন্মেই মা রে খেল তো গেরাম উদ্ধার নয়তো সব ফসসা !

—ওমা সেকি ! এরম আবার হয় ! বড় রায় টা কে ? বাঘ ?

—হিঁ , নয় তো কে ? তবে আমোরাও ঢ্যাটা , যক্কনি না দেকা ঝাড়ে ফুল , সে ঝাড়রেই দাও নিকেশ কইরে ! টোকা সমেত মাগীও শেষ ! ঝামেলিও শেষ !

—ও মা কি নিষ্ঠুর ! পুরো গাছ কেটে দিলো ফুল হয়েছে বলে ? … এই চা পাতা টা এতক্ষণ ভিজিয়ো না কাকিমা ! এটা পাতলা লাল চা এর পাতি তো …ছেঁকে ফেলো ।

—এইটেয় দুদ দিলে বড্ড ফ্যাকফ্যাকানি হবেনে মা ?

—হ্যাঁ তো , এই আমাদেরটা ছেঁকে ফেলে এট্টু গুঁড়ো পাতি দিয়ে বাকিটা ফুটিয়ে নিয়ে দুধ দাও । তোমার পছন্দ মত কড়া হয়ে যাবে ।

—মামন এর আমাদের সব্ব দিকে নজর । নক্কি মা আমার ।

—তারপর বল না …সেই যখন লুঠ কম্মে যায় …তারপর ?

—ওওওও হেহ্ হেহ্ …আমিও ঝেই বকতেই আচি , তুমিও মা শুনতেই আচো । কতায় বলে না , তেতলের টকটকানি আর রাড়ি মাগের বকবকানি …

—উফফফফ কাকিমা বলবে ? খালি বাজে বকে !

—এই যে মা গো বলি বলি … সে হল গে যক্কনি না সারি বেঁদে তেনারা যাবেন, পেচুন দিগদে আসবেন বড় রায় , আর সজাগ থাগলে তিনি জানছেন নেওয়া যাবে নে । এনরা সজাগ ! এনরা মস্ত করে পুজো দেছেন তবে গিয়ে পা রেকেচেন । আর তারপরেও হল গে তোমার যেনাদের গুনিন যত হাঁকারের তেনাদের ততখন আয়ু ! কিন্তুক তার ওপরেও কতা আচে । ঝে তুমি মনিষ্যিটা সঝাগ কিনা ! এমুন হয় বোঝলা মা , ঝে এই আচে আচে আচে …অ হারান আচো ? এজ্ঞে আচি । অ শিশির আচো ? এজ্ঞে আচি ।তা কাজ সেরে বিবিরে পেন্নাম দিয়ে নৌকার কাচদিগে এসেই না দ্যাকে , অই তালে নে গেচে …অ হারান আচো ?? …তা সেই ঝে নেই তো নেই …তুমিও ঝানলে যে হারান সঝাগ ছেলো নে । মঅনে আন কতা চলতেছিল হয়তো । হয়তো অপবিত্তির কিচু মায়ড়েছেলো ।

—যাহ্‌ বাঘের সঙ্গে অম্নি সজাগ থাকা যায় ? আর আন কথাই বা কি শুনি ?

—কাম কোরোদ , হিনশা হিনশি , লোবের কতা পাপের কতা ঝ্যাত ভাববে , তত তুমি ডুবতেচ মউলে ! বড় রায় দ্যাকেন কোন মনিষ্যিটি দুব্বল । উনি তারেই ন্যান । ওতেই মনিষ্যি অঝাগ , ওতেই মনিষ্যি বেখেয়াল , ওতেই মনিষ্যি দুব্বল আর হল গে ওতেই মনিষ্যির মরন । তার পর ! চৈত্র মাসের খোলা পাতা ক্যালেন্ডারের , সেল এর ঝকঝকে বিজ্ঞাপন, উমদা দখিনা বায়ু সব্বাই বলে , “তার পর ! ওরে বাবা তার পর কি হল বল না মাগী ?”

—তারপর আবার কি ? মদু নে তোমরাও অম্নি গেরামে ফিরলে , সগগলের মাগ শাকা সিন্দুর চড়ালে , হারান এর মাগ এসে বিবিতলায় আছড়ে পল্লে একন । তা পোয়াল জানছ মামন পোয়াল ?

—খড়ের আটি ?

—হে হে ! মামন আমাদের জানচে কিন্তুক অনেগটা ! তা সেই পোয়াল দে তৈরি মনিষ পরমান এগটা পুতুল এইনে হারান এর ঘরে শুইয়ে দ্যায় । ঝে , এই নাও ! তোমাদিগের ছেলে , নে গেচলাম , কিন্তুক চেতন হরেছ্যালো মোদের । মোদের অঝাগ হয়েছ্যালো , মোদের পাপ হয়েছ্যালো নিজ্যস । তাই এই আনছি , এরে পোড়ায়ে সতকাঝ কর অনে ।

—আর হারানের বউ ??

—হারানের বউ ??? তার কুনো দুঃখ নাই । তার সোয়ামীরে নেছ্যালো বনের বড় রায় ! তা বাদে রাত্তির কালে জলসরতে ঝেই না সে বায়রায় , রোজই কুনো না কুনো বড় রায় ঝামরে পড়ে তার উপ্রি । এনরা হলেন গেরামের বড় রায় ! সে বড় শুকের কাল , তবে ধর গে বাঁশের গাচ । ফুল ধরলি , নিকেশ করি দাও । গা গেরামের ভালো বই মন্দ হয় নে তাতে ।

—তারপর ?

—ইঁচড় এ পিয়াজ দিবানা অ মামন ! তারপর আর কি ! বাঁশগাচ আলি কলকেতা । লাল ফিতা বেঁধে । তয় পিয়াজ কাটি ? …

২/ পালন

—বাঁশ গাচ নিয়ে অত কি কতা বল দিনি ? তবে কি ও হল গে কাঝের বঅস্তু । ঝে জিনিসডা ঝানবে কাঝের সে জিনিশডা নিয়ে কতা হবে কম । পিয়াজ কি ঝিরিঝিরি না ডুমো কাটব অ বউদি ! মামন মা গেল কই ?

—এই যে । ডুমো করে কাটো কাকিমা । মিক্সি তে ঘুরিয়ে নেব । তুমি আগে রসুন গুলো ছাড়াও ।

==এই ঝে ধর ইঁচড় রাঁদতেছো না , আমাদের দিগরে এমনি করে রাঁদে বাঁশ কোঁড় । খেতে লাগে ঝ্যানো মদু ! অই দে এক পাতর ভাত সাপ্টি । জলের দেশ তো মা , রান্নায় মরিচ খুবোই । এক্কেরে সে লাআআল ডগডগ করবে সে খাবে আর জ্বলবে । ঝ্যাত জ্বলবে অনে ত্যাত খাবে ।

—বাবা শরীর বিগড়োয় না গো তোমাদের অতো ঝাল খেলে ?

—নাআআআআআআ না ! কুম্ভির কামঠার সঙ্গে থাকা ! সরীলে জ্বলন চাই না ! লেতিয়ে ঝাবে যে । অ্যামন খাবে ঝে সরীল থাকবে টন্টনা । হেঁসো ঠ্যাগালে আওয়াজ হবে ঠং করি ! তবে না সরিল !

—তা সেই কি-না-কি রাঁধতে বললে …? বাঁশের কি ?

—কোঁড় গো মামন কোঁড় । ঝ্যাকন ঝাড় এর পাশ দি কচি লগা মুখ ছাড়ে , ত্যাকন খেয়াল রাকতি হয় । কদ্গুলান গায়ে গায়ে হয় , কদগুলান ছাড়া ছাড়া । অই চারার পরে হাঁড়ি চাপা দিলি অ চারা দেবে যাবে। উপ্রি উঠতি পারবে নে । ত্যাকন অই হাঁরির চাপে বাদাকপির মতন ফুলসা হইয়ে ফুলে উটবে ।

—-ক্যানো ?

—ওমা মানুষ রে দ্যাকোনি ? উপরি বাড়তি না দিলি আশ পাশে বাড়ে নে ! এও ত্যামোন । এরপর দাও গে তুমি সে হাঁড়ির উপরি পাতর বা ইট চাপ্যে । নাইলে অই হাড়ি সমেত লগ লগ করে চারা ছুটবে আকাশপানে । মামন ? এই দ্যাকোনি …অ্যাদ্গুলান কাটি আলু ?

—অত না অত না ! অত আলু দিও না । মা-র সুগার না ! ছেলেটাও তো আলু বেছে ফেলে দ্যায় । এদের খাওয়ানো না…ঝঞ্ঝাট । কদিন পরে নিজেই বুঝে যাবে !

—হি সে চিন্তা করোনা মাগো ! আমারে তুমি দ্যাক্তাছ । তোমারে আমি দ্যাকবো এইতো কতা ! কিন্তুক তোমারে দেগলি কে বঅলবে অদ্ বড় ছ্যালার মা ! তোমারে বর ছ্যারি দ্যাছেলো না তুমি ?

—আমি ই ছেড়েছি ।

—পচন্দ না হলি সিদা কতা ! ফুলির কাচে অনেজ্য পাবেনে । সেই বলে নে …বজায় থাকুক চুরা বাঁশি / রাই হ্যান কত মিলবে দাসী । তা মোদেরও ত্যামোন ! অই তো কুমুদ এর বুনডা । বিয়ে হল সব হল , তা বাদে শনলাম তেনার দাঁড়ায় নে । আর সে দাঁড়ালেও ধরগে অ্যাত এট্টুসখন ঝে …

—হি হি হি হি…কাকিমা ! ইশ তোমার মুখে কিচ্ছু আটকায় না ! যা তা ! ইসসস ! দিয়ে ? তারপর কি হল ?

—তা আর কি করবে বল মা ঝা ঘটনা তা তো ঘটনা । তা বাদে সউরঘরের লোগ আসে , কতা দ্যায় ঝে জামাই রে হেকিম দ্যাকাবে । তা সে মাগী অ্যামোন গেঁঠুলী , ঝে বলে হেকিম এ ঝদি ঠিগ না হয় ত্যাকন ! তা বাদে অর দ্যাওর ঝামরে উঠে বলে …সে না হলি আমরা আছি খন ঘরের বউ রে আমরা ঘরেই রাগতে পারি ,তোমার কষ্ট হবেনে কিচু । তবে সে গিয়ে কুমুদ বোনডা রে রাখি এল । ঝাল এর সরিল না ! কেউ কারু অভাব রাখেনে ! অন্তক সাদ্যে কুলোলে রাকেনে ।

—সে কি ? আর ঐ মেয়েটার দেওর এর বউ-টউ ছিলো না ! সে কিছু বলবে না নাকি ?

—ক্যান বঅলবে ! কও দিনি ! মাইয়া মাইনশে মাইয়া মাইনশের দুকখু বজবে নে ? অর মরদ পারে না আমার মরদ পারে । এই তো হল কতা । তা ঘরের লোক পারলি বউ রে বাইরে নাং করতি হয় নে !

—ঝগড়া বাধে না ! বাপ রে বাপ কি যে বল মাথা ঘোরায় আমার…।

—ও কাকিমা !… কি ভাব গো ?

—……উঁ ?……তা বাদে …অনেগ দিন হয়ে গেলে সে হাঁড়ি সরায়ে অই বাঁদাকপির মতুন ? তারে কেটে প্যাঁজ রলুন দে ঝরা ঝরা করি , এড্ডু ত্যাল লাগে বেশি । ঝদি পাই কখুন খাওয়াব অ মামন। দেকো ! … এট্টু ঘুম ঘুম পায় খেলি নেশা মতুন । ছেলে পিলেদের তাই দ্যায়নে ।

—রক্ষে কর বাবা !

—না রে মা । অই হাঁড়িচাপা দিয়ে কোঁড় হয় , কিন্তুক ওজন এক্কেরে মাপমতুন চাই । নইলে অই ঝে বললাম , হাঁড়ি সমেত সে চারা আশমানে ঠ্যাগবে , সে না তোমার কাঝে লাগবে না গাচের । তার চেয়ে হয় ন্যায্য ওজন দ্যাও নয় চাপা দিয়োইনি এক্ক্যারে । ঝে দিগে পারো বাড়োন দ্যাও, কিন্তুন সরীল রেকো ঝালের । হেয়ার অভাব ঝ্যান না থাকে ।

৩/কামড়

—ও কাকিমা ! কাকিমা শীগগির ! শীগগির ! ওরে বাবারে ধর ধর ! ধর বেরিয়ে আসছে ! ওমা !

—মেয়ের যেমন কান্ড , কিনিস ক্যানো এসব সামলাতে পারিসনা তো । খাওয়ার লোভ এদিকে ষোল আনা ! ওওওও ফুলি এস শিগগীর এদিকে ! ও কাপড় থাক পড়ে ।

—আরে ছেলেটা সেদিন খাবে খাবে করল তাই নিলাম । রাঁধতে তো পারি ।

—তা তো পার মা কিন্তু কাটতে তো পারো না ! কিকরে দশ বছর সংসার করলি কে জানে ! কাটিয়ে আনতে হয় এসব তাও জান না !

—এই যে এই যে মা গো আসি গেচি নে …এক্ক্যারে সিদা…মোক দাও দিনি ! তোমারে শিখোয় দি মা , খাওনের বস্তুডা কাটন কোটন ও জানত্যাছো না মা গো ! আস দিনি বারেন্ডায় !

—ও কাকিমা পারব না পারব না ! তুমি কর …ও বাবা গো চিপকে দেবে ! দাঁড়া দেখছো না ?

—ডাড়া থাকবে নে ? অতেই তো রস রে মা ! অই দাড়া মটকায়ে দিইয়েছ তবে না তুমি রান্ধন কঅরছো ! অ্যায় যে ধর উল্টাদিগে ধর রে মা ! উল্টাবাগে ধর ! ঝার ঝানবে যে দিগে জোর তুমারে ধরতে হবে তার উল্টাবাগে । ধর ধর ভয় পালি চলবে না মাগো ।

—ছেড়ে দাও না কাকিমা ! আমি পারব না !

—না পারলি চঅলবে ক্যানো মা ? পাক পাখালি রে দ্যাকোনি ! ছানা পুনা রে উড়ান না শিখোয়ে ছারলি চলে ? ধর দিকি ! হিঁ মটকান দাও মটকান দাও !অ্যায় তো ! আরেগটা দাড়া ধর দিনি !

—কাঁকড়া না ছাড়াতে পারলেও আমার চলবে ! ও বাবা গো ! ইইইই শিরশির করে ! ইরিবাবারে পাগুলো খড় খড় করছে !

—কঅরবে তো ! ধরবে তো ! তার অ্যাকোন মরন ঝোঁক ! অমনি করেই ধরবে ! ব্যাটাছেলেরা ধরে য্যামুন ! আঁকুড়ে বাকুড়ে ! ঝ্যান তুমি ছাড়া ত্যাকুন তিসংসারে কেউ নাই কো ! তেমুন ! নয় !

—ধ্যাত কাকিমা ! কি যে বল না !

—ক্যান ! অমন ভেরম হয় রে মা ! তবে সগগল পুরুষে অ্যামুন ধরতে পারে কই ! য্যাকুন ধরবে মনে নিবে দুখান বই হাত বুজি তার আরো চার খান আছে ! দুখান কাইন্ধে ! দুখান কুমোরে বিরবিরাবে । দুখান পাছায় ! মনে লবে তার সব্বাংশ বুজি হাত ! হাত ছাড়া তার আআআর কিচু নাই গো ! পশস খালি ! তা বাদে কেচু নাই ! খালি তুমারে ছান্তি চায় আর কেচু চায় নে । তেমন মানুষ কম টা–

—শেষে কাকড়া ! হি হি হি! কাকিমা !

—হিঁ গো ! ক্যাংড়া ! তবে অর চ্যায়রা খান না , অর আকুলি বিকুলি খান সুদু নাও ! জলে মাচের খলবলানি দ্যাকোনি ? অর মোচর খানি সুদু নাও ! হাওরের জলের উপুর দিয়া হাওয়া যায় অনে ! অর বিল বিলানি খান সুদু নাও ! তোমারে কেউ ধরে নাই অমুন করে ? তুমি অমুনধারা বিল বিল কর নাই ককুনো ? ………অ মামন ! এই ঝে এই নিচদিগে চাপন দাও ! খলাডা উল্টায়ে যাবে নে ! দাও ! চাপন দাও ! চাপন দাও ! অ্যায় ঝে ! খাওনের বস্তু মা গো ! কাটন কোটন না জানলি !

৪/অন্ন

—সর্দি তে ঝামোর-ঝোমর কর মা ! খালি ওসুদ-পালা খালি ওসুদ-পালা ! টোটকা কর দিনি ! এই দ্যাকোসে ! গরম ভাতে এটুক খানি মাকো তো ! অল্প এট্টুন মাকো!

—হেব্বি তো ! মুখ টা ছেড়ে গেল গো ! কি এটা !

—এইটা? এইটা হল খারকোন ! নাম সুনচো মামন ? কচু । এগরকমের কচুর সাগ !

—কিন্তু গলা চুল্কোছে না তো ! বাবা ! নাক পুরো ক্লিয়ার !

—চুলকোবে ক্যানো ? কালো জিরা রসুন আর সুকনা মরিচ তাওয়ায় খোলা ভাজা করি নিতি হবে । তা বাদে পাতা গুলোন রে আগুন তাতে সেঁকে সগগল ডি একসঙ্গে শিলে বাটন দেই নিচি ! অম্নি তোমার সর্দি বল ক্যাঁচা সরদি বল , অরুচি বল, পোয়াতি ঘা বল …সরিলডা এক্ক্যারে শুকোয়ে ঝনঝনা করি দিবা !

—কিন্তু খেতেও দারুন ! মা খেয়েছ ? পেলে কোথায় কাকিমা ?

—আর বল না ফুলির কথা ! এর বাড়ির লতা-ওর বাড়ির পাতা ! মানিকদের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক এর ধারে হয়েছিলো ! ওর চোখ এড়ায় ! খোশ গল্প করে তুলে এনেছে ! মানিক এর বউ বলছিলো এমা তোমরা এসবও খাও বউদি ? লজ্জায় মরি ! কোনদিন লোকে হাত কড়া দিয়ে নিয়ে যাবে !

—হঃ! বুউদির ঝ্যামন কতা ! হয়ে শুক্যে যাবার চে খাওয়ন ভাল নয় কো ? তুলেচি তো কি ! অনরা তো খায়নে বলল এসব ! তা বাদে মোরা ঝদি খাই তাতে দুসবে ! আর ঘাড-দুষ না নিলে বলি বউদি খাওনের আপনেরা বোজেন কম । ঝদি বলেন ক্যানো ? আপোনাদের খাওনের কত্তডি জিনিস ! হ্যানো রে ত্যানো রে ! তাইরে হয়িছে কি , দব্যগুন গুলান আপনেরা ভুলি গ্যাচেন এক্ক্যারে ! খাওনের আসলডা অইল ভক্তি ! ভক্তি না থাকলে রাজভোগও অযুগ্যি ! আর ভক্তি ছেদ্দা হলি পরে ,দ্যাকেন গিয়া আমোরা তেলাকুচা শাগের সুক্তুনি খাই ! তাত কত যদ্ন করে বেগুন দ্যাবা ! কচি কুমরা দ্যাবা ! দুইখান আলু ফাল দিয়া দিয়া দ্যাবা ! এক্টুস আদা না থাগলি পরি মনরঞ্জন এর থিগে আনবা ! যদ্ন ! অইটে দিয়ে আপোনে তেলাকুছা রান্ধয়েন ! অমেরত !

… রুচি নাই ! যদ্ন করেন ! দুটা শুঁকা মরিচ এ আসে হেই রুচি ! ভাতের সানকীর সামনে বঅসবেন তো চক্কু ভরে জল আসবা ! ঝে ভাআত ! অন্ন ! এই বেলাডা তুমি তবে থাকে আসলে গো মা ! অম্নি ভেটেল ধানের চালির এই মডা মডা ভাত ভাঁটি ফুল পারা ফুলসে অটবা গো মামন ! যদ্ন ! যদ্ন চাই না ! তাক্যে বলতে হবে নি ! ঝে তুমি কি সোন্দর ! তোমারে বান্যে আমি সোন্দর ! তোমারে খেইয়ে আমি সোন্দর ! তবে আসবে রুচি , তবে আসবে খুধা ! ঝদি বলেন ক্যানো ! আপনেরা খাওন পারেন কই! যদ্ন কই গো বউদি আপোনাদের ! তবে দব্য ঝদি বলেন…হ্যা তা স্বীকার ঝেতেই লাগবে ঝে আপোনাদের তাআআআ অনেগ !

—অ মামন ক্যামুন লাগলো অ মা ! খারকোন ? পচন্দ হোল ! যদ্ন ?

৫/ মাটি

—তুমি মোরে কাকিমা কও ক্যান দিকি মা ? আমি কুন সুবাদে কাকিমা অইলাম ?

—ওমা ! ঐ যে ফটিকদা তোমায় দিয়ে গ্যালো ও-ও তো কাকিমা ই বলছিলো !

—তা ফটিক তো বঅলবেই রে মা ! অর কাকার সঙ্গত আমি ছেলুম না কদ্গুলান দিন ! কিন্তুক তুমি সেই ডাকে সম্পক্ক কইর না ! তুমি মোকে মোক সুবাদে ডাকো!

—মানে ?

—মাসি বল ! পিসি বল ! কিন্তুক মোকে আন সুবাদে ডেকো নি অ মা !

—আচ্ছা বাবা আচ্ছা ! ফুলিপিসি ! হল ! আরে আরে ওগুলো নিয়োনা ওগুলো আমি ধোব ! ধোর না দাগ লেগেছে সব !

—রিতু র দাগ লাগিচে ? তা কি? অ তো রুপের দাগ মা ! ওকি অচ্ছেদ্দার না নিঘিন্নার ! আমি ধুয়ে দি অনে সর দিকি !

—এমা নানা তুমি ধুয়োনা ! আমার খুব বাজে লাগে …ছি ছি ! কাজ কর বলে কি যা খুশী নাকি ! ছাড়ো এগুলো !

—তোমাদের ব্যাপারস্যাপার অবাগ লাগে মোর ! এর চেইয়ে পবিত্তির কি রে মা ? তর পেড এর মদ্যিখানে কুম্ভারে চাকা ঘুরায় ! মাডি কাটে ! তায় পুরুষ মানষে তাত দিলে সে হল গে ক্যাঁচা কলসি পোড়েন এ বসলেন ! কিন্তুক চাক খানা ? সে খানা কে ঘুরায় ! যদ্দিন চাক ঘুরবা এই ক্যাচা মাটির দাগ লাগবা কাপড়ে ! বিছনায় ! পাটিতে ! ততদিন কুম্ভার এর চাকা তুমি ! মাডি তুমি ! ছাঁচ তুমি ! সগগুল ডি চাইবে আগুন ছেঁয়াতে ! তুমি আগুন ছানবে , বাছবে , তাত দ্যাকবে , আঁচ দ্যাকবে , তার দম দ্যাকবে …দেকে সুনে পোড়েন দ্যাবানে ! একি কম কতা মা ! না নজ্জার কতা ! দাও দিনি এদিগে !

—ধ্যাত ! ফের ভাট বকে !

—ধ্যাত কি রে মা ! অই তো রুঅস্য ! আঙ্গুর আছিল আমার সই ! সে সময় কি বল দিগি মা ! আমোদিগের তো অত ন্যাকড়া-চোকড়া ছ্যালো নি । ধান কাটনির সময়তে অই ঝে কাপড়খান পরনে সেইডির খুটো ডাই ভেতর অঙ্গে দিথাম অনে ! রাত্তিকালে আলগা দ্যাতাম আর মাজার তলে কলার পাত দিথম । আঙ্গুর অ্যাগ দিন বলছ্যা কি ওর সোয়ামি অরে কয় , এমুন সময়ডায় নাকি দশগুনো সোন্দর দ্যাকায় অই অঙ্গ ! আমোরা তো হেসে কুডোপাডী হচ্ছেলেম ! সে বলে নি রে ফুলি শোন মোক কতাখান! মিন্সে বলে কি …মনে লয় কালা একখান অসত্ত পাতে কেবা অক্ত চন্নন ছ্যাডায়চে । পুজা পুজা লাগে ! মেইয়াদের রুওস্য বড় কাচা খেগো রে মা ! ভয় করতি পারো , ভকতি করতি পারো , পিরীত করতি পারো …কিন্তুক নজ্জার নয়কো !

—মামন ! কি ভাবো রে মা গো ? চুপিচাপি ক্যানো ??

—আর… আর… যেদিন থেকে আর দাগ লাগবে না পিসি ? সেদিন?

এই কতা ! এ আবার কি চিন্তা গো চিন্তামনি আমার ! মরা চাক দ্যাকোনি ! কুম্ভার ঘুরায়নে , মাডি চড়েনে , হেইলে থাগে এগ দিগে ! কিন্তুক ভাঙ্গা চাকে মাতা ঠ্যাকায়ে কুম্ভাররা পতে নামে ! ঝে ব্যাগ্যতা করি মাগো ! আঝগে তুমি অচল বটে! কিন্তুক তুমি ঝে অ্যাগদিন সচল আছিলে তার পরমান তুমার এই হেইলে থাকন ! তুমি দ্যাকেচো অনেগ , ঘুরেচো অনেগ ! তুমারে পেন্নাম মা গো ! দেকো ঝ্যান্ ভুল আঁচে বেভুল মাডি না চড়াই মা ! এই তো কতা !